বৌদ্ধ ধর্মের মূলনীতি | বৌদ্ধ ধর্মের ধর্মমত।
বুদ্ধদেব ছিলেন বাস্তববাদী ধর্মপ্রবর্তক এবং সমকালীন বাস্তবতাকে তিনি সম্যকভাবে উপলব্ধি করেছিলেন। আত্মা ও ঈশ্বর সম্পর্কিত বিতর্কে অংশগ্রহণ না করে জাগতিক সমস্যাগুলিকে কেন্দ্র করেই তিনি তার মতবাদ প্রচার করেন।
তাঁর ধর্মের মূল লক্ষ্য হল মানুষকে দুঃখ থেকে নিস্কৃত্তি লাভের উপায় সম্পর্কে সন্ধান দেওয়া। তিনি নিজেই বলছেন যে, বহুজনহিতায়, বহুজনসুখায়, লোকানুকম্পায়’ হল তার ধর্মপ্রচার।
তিনি বলেন যে, “সমুদ্রের জলের যেমন একটিই স্বাদ, তা হল নোনা, আমার ধর্মের একটিই লক্ষ্য, তা হল মানুষকে দুঃখের হাত থেকে মুক্ত করা।”
আর্যসত্য বৌদ্ধ ধর্মের মূলনীতি।
বৌদ্ধ ধর্ম চারটি মূল সত্যের উপর প্রতিষ্ঠিত। তাঁর মতে : (১) জগৎ দুঃখময়, (২) কামনা, বাসনা, তৃষ্ণা ও আসক্তিই হল দুঃখের কারণ, (৩) দুঃখের কারণগুলি ধ্বংস করে দুঃখের হাত থেকে নিষ্কৃতি পাওয়া যায় এবং (৪) এই কারণগুলি ধ্বংসেরও উপায় আছে। এই চারটি সত্যকে ‘আর্যসত্য’বলা হয়।
বৌদ্ধ ধর্মের অন্যতম মূলনীতি অষ্টমার্গ।
মানুষের আসক্তি বিনাশের জন্য তিনি আটটি পথের কথা বলেছেন। এগুলিকে ‘অষ্টমার্গ বা অষ্টাঙ্গিক মার্গ’ বলা হয়। এগুলি হল (১) সৎ বাক্য, (২) সৎ কার্য, (৩) সৎ জীবন (৪) সৎ চেষ্টা (৫) সৎ চিন্তা (৬) সৎ সংকল্প (৭) সৎ দৃষ্টি ও (৮) সৎ সমাধি।
এই ‘অষ্টমার্গ’-এর অনুশীলন করলেই অন্তরে প্রজ্ঞা’বা পরম জ্ঞানের সঞ্চার হবে এবং তা থেকেই আসবে নির্বাণ বা মোক্ষ। নির্বাণ হল কামনা-বাসনা, শোক-দুঃখ-কষ্ট, ব্যাধি-জরা, মৃত্যু, অপবিত্রতা প্রভৃতির উর্ধ্বে এমন এক অবস্থা,
যেখানে অপার শান্তি ও অনন্ত সুখ বিদ্যমান এবং সেখানে পৌছলে আর পুনর্জন্ম হবে না। তিনি মনে করতেন যে, চরম ভোগবিলাস এবং চরম কৃচ্ছসাধনা ও তপশ্চর্যা—দুই-ই আত্মার উন্নতির পথে বিঘ্নস্বরূপ।
এ কারণে তিনি এই দুই চরমপন্থার মধ্যবর্তী ‘মধ্যপন্থা’ বা ‘মধ্যপথ (মঝিম পন্থা অবলম্বনের পক্ষপাতী ছিলেন। এছাড়া তিনি বেদের অপৌরুষেয়তা। যজ্ঞের কার্যকারিতা, অনুষ্ঠানসর্বস্বতা, জাতিভেদের কঠোরতা এবং স্বর্গ বা ঈশ্বরের অস্তিত্বে বিশ্বাসী ছিলেন না।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন