হজরত মুসা (আঃ) নবীর জীবন কাহিনী।

ইহুদি ধর্মের বর্ণনা অনুসারে হজরত মূসা (আঃ) হলেন সর্বশ্রেষ্ঠ নবি। তিনি মিশরে বানী ইসরাইল বংশে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। সেই সময় তারা বিভিন্ন জনগোষ্ঠীতে বিভক্ত রয়ে বিচ্ছিন্নভাবে মিশরে বাস করতো। 

নবি হওয়ার পর হজরত মুসা (আঃ) তাদের সকলকে একত্রিত করে একটি ঐক্যবদ্ধ জাতিতে পরিণত করেন। এই হিসাবে ইহুদিরা তাকে নিজেদের প্রতিষ্ঠাতা এবং সর্বশ্রেষ্ঠ নবি বলে বিশ্বাস করে থাকে।

ইতিহাস থেকে জানা যায় যে- প্রাচীন মিশরের রাজধানীর নাম ছিল পেন্টাটিউক। নীলনদের তীরে এই নগরে বাস করতেন মিশরের বাদশাহ দ্বিতীয় রামেসিস। 

মিশরের অন্যান্য বাদশাহদের মতো এই বাদশাহরও উপাধি ছিল ফেরাউন। কিন্তু পরবর্তীকালে আসল নামের পরিবর্তে উপাধি ফেরাউন নামেই তিনি পরিচিতি লাভ করেন। 

হজরত মুসা (আঃ) নবীর জীবন কাহিনী।

তিনি ছিলেন দোর্দণ্ডপ্রতাপ সম্রাট। প্রতিটি দেশবাসীর পক্ষ থেকে তিনি আনুগত্য লাভ করার পর নিজেকে খোদা বলে ঘোষণা দিয়ে সকলে যেন তার উপাসনা করে সেই মর্মে আদেশ জারি করেছিলেন।

তৎকালীন সময়ে মিশরের রাজধানীর একেবারে শেষ প্রান্তে বাস করতেন বনী ইসরাইল জনগোষ্ঠী। ফেরাউনের প্রতি তারা কখনই পূর্ণ আনুগত্য প্রকাশ করেননি। তারা ছিলেন ধর্মভীরু। ফেরাউন নামক একজন রক্তমাংসের মানুষকে সৃষ্টিকর্তা হিসাবে মেনে নেওয়া তাদের পক্ষে সম্ভব ছিল না। 

তাই সর্বদা ফেরাউন তাদের ওপর দমন পীড়ন চালাতেন। এই পরিস্থিতিতে রাজজ্যোতিষীরা ফেরাউনকে জানালেন যে বনী ইসরাইলদের মধ্যে অচিরেই একটি পুত্রসন্তান জন্মগ্রহণ করবে যার হাতে ফেরাউনের সাম্রাজ্য ধ্বংস হবে। 

এতে ভয়ার্ত হয়ে ফেরাউন আদেশ দিলেন যে কোন বনী ইসরাইল পরিবারে পুত্র সন্তান জন্মগ্রহণ করলেই যেন তাকে হত্যা করা হয়। এই আদেশের পরে ফেরাউনের সৈন্যরা বনী ইসরাইলদের শিশু সন্তান অকাতরে হত্যা করতে লাগলো। 

বনী ইসরাইলদের মধ্যে বাস করতেন ইমরান নামে একজন ধর্মভীরু ও সৎ ব্যক্তি। তাঁর স্ত্রী ছিলেন গর্ভবতী। কিছুদিনের মধ্যেই তিনি একটি পুত্রসন্তান প্রসব করলেন। আর ফেরাউনের সৈন্যদের হাত থেকে বাঁচানোর জন্য একটি ভেলার ওপর শিশুপুত্রকে রেখে নীল নদীতে ভাসিয়ে দিলেন। 

ভাসমান ভেলাটি কোথায় গিয়ে ঠেকে তা জানার জন্য দূর থেকে লক্ষ করে যাচ্ছিলেন শিশুটির বোন। অবশেষে দেখা গেল ফেরাউনের রাজপ্রাসাদ লাগোয়া নদীর ঘাটে গিয়ে ওই ভেলাটি আটকে গেল। 

এই ভেলার খবর পরিচারিকারা ফেরাউনের বাড়িতে দেওয়ার পর সকলে মিলে ভেলার থেকে শিশুটিকে তুলে নিয়ে গেলেন। ফেরাউন প্রথম দৃষ্টিতেই বুঝতে পেরেছিলেন যে এই শিশুটি তারই শত্ৰুগগাষ্ঠী বনী ইসরাইলদের কারো হবে। তাই তিনি শিশুটিকে তৎক্ষণাৎ মেরে ফেলতে চেয়েছিলেন। 

কিন্তু তার কোনো পুত্র সন্তান না থাকায় তার স্ত্রী, হজরত আসিয়া (আ.) এই শিশুপুত্রকে লালন-পালন করতে চাইলেন। অনিচ্ছা সত্বেও ফেরাউন আপন স্ত্রীর আবদার মতো রাজপ্রাসাদের মধ্যে শিশুটিকে লালন পালন করতে লাগলেন। 

বলাবাহুল্য এই শিশুটিই হল ওই পুত্র সন্তান যার ব্যাপারে জ্যোতিষীরা ফেরাউনকে সাবধান করেছিলেন। এবং এই শিশুটিই হলেন হজরত মূসা (আ.) যাঁর হাতে পরবর্তীকালে ফেরাউনের পতন ঘটবে।

আরও পড়ুন।