চোখের নিচে কালো দাগ কেন হয় ও কোন রোগের লক্ষন।

আপনার চোখের নিচে কি কালো দাগ হয়েছে? তাহলে জেনে নিন চোখের নিচে কালো দাগ কেন হয় ও কোন রোগের লক্ষন।

বর্তমানে দুশ্চিন্তা, নিদ্রাহীনতা, ডিহাইড্রেশন সহ বিভিন্ন জীবনযাত্রার কারনে ও নানা বড় রোগের প্রভাবে চোখের নিচে কালো দাগ হওয়া একটি বড় সমস্যা হয়ে দাড়িয়েছি। 

তাই স্বাস্থ্য সচেতনতা বৃদ্ধিতে সকলেরই জানা উচিত চোখের নিচে কালো দাগ কেন হয় ও কোন রোগের লক্ষন এবং তা দূর করার উপায়। 

চোখের নিচে কালো দাগ কেন হয় ও কোন রোগের লক্ষন।

চোখের নিচে কালো দাগ কেন হয়। 

বিভিন্ন পারিপার্শ্বিক কারন ও রোগের লক্ষনে চোখের নিচে কালো দাগের সৃষ্টি হয়ে থাকে। রোগ ছাড়াও যে সকল দৈনন্দিন কারনে চোখের নিচে কালো দাগ হয় তা হলো-

জেনেটিক্স: চোখের নিচের কালো দাগ কখনো কখনো বংশগত কারনেও হতে পারে। বিশেষ করে যাদের ত্বকের টোন গাঢ় তাদের মধ্যে এটি আরও লক্ষণীয় হতে পারে।

নিদ্রাহীনতা: ঘুমের অভাবে ত্বক ফ্যাকাশে হয়ে যায়। পর্যাপ্ত পরিমান ঘুম না হলে চোখের নিচে বলিরেখা সৃষ্টি হয় ও কখনো কখনো চোখের নিচে গর্তের মতো হয়ে কালো দাগটি আরও বেশি লক্ষনীয় হয়। একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের দৈনিক ৬-৮ ঘন্টা ঘুম না হলে এ সমস্যা দেখা দেয়।

মানসিক চাপ: অতিরিক্ত মানসিক চাপের ফলে চেহারায় বিরূপ প্রভাব পড়ে। এতে ত্বকের উজ্জ্বলতা হারায় ও চোখের নিচে কালো দাগ সৃষ্টি হয়। 

বার্ধক্য: আমাদের বয়স বাড়ার সাথে সাথে আমাদের ত্বক পাতলা হয়ে যায় এবং কোলাজেন হারায়। যার ফলে আমাদের চোখের নীচের রক্তনালী গুলো আরও দৃশ্যমান হতে থাকে। এবং চোখের নিচে গর্ত ও অন্ধকার ভাব দেখা দেয়।

ডিহাইড্রেশন: আমাদের শরীরের প্রায় ৭০ ভাগই পানি। তাই শরীরে পানির প্রাপ্যতা কম থাকলে নানান রোগের পাশাপাশি ত্বকেরও বিশেষ ক্ষতি হয় এবং তখন ত্বক নিস্তেজ হয়ে পরে। এর ফলে চোখের নিচে কালো দাগ বা ডার্ক সার্কেল হয়।

অ্যালার্জি: অ্যালার্জির কারণে চোখের চারপাশে প্রদাহ এবং ফোলাভাব হতে পারে, যার ফলে ডার্ক সার্কেল দেখা দেয়।

সূর্যের এক্সপোজার: সূর্যের সংস্পর্শে ত্বকে আরও মেলানিন তৈরি করতে পারে। মেলানিন ত্বককে গাঢ়, মোটা ও কালো করে তোলে। যার ফলে  হাইপারপিগমেন্টেশন এবং চোখের নিচে কালো হতে পারে।

অপুষ্টি: পর্যাপ্ত পুষ্টির অভাবে ত্বক তার উজ্জ্বলতা হারায়। বিশেষ করে আমাদের চেহারায় এর প্রভাব পরে থাকে। এই অপুষ্টিজনিত কারনে ও রক্তস্বল্পতায় চোখের নিচে কালো দাগের সৃষ্টি হয়।

উপরোক্ত আলোচনায় জানতে পারলাম সাধারনভাবে চোখের নিচে কালো দাগ কেন হয়। ও কোন রোগের লক্ষন চলুন জেনে নেই-

এই আর্টিকেল গুলো পড়ুন।

চোখের নিচে কালো দাগ কোন রোগের লক্ষণ।

চোখের নিচে কালো দাগ সাধারনত কোনো নির্দিষ্ট রোগের লক্ষণ নয়। তবে এটি অন্তর্নিহিত অবস্থার লক্ষণ হতে পারে। সাধারনত উপরোক্ত কারনেই চোখের নিচে কালো দাগ হয়ে থাকে তবে বিরল ক্ষেত্রে বিভিন্ন বড় রোগের প্রভাবে ও পুষ্টিজনিত সমস্যায় চোখের নিচে কালো দাগ হয়। যেমন-

  • পেরিওরবিটাল হাইপারপিগমেন্টেশন (POH) নামক একটি স্বাস্থ্যগত অবস্থায় মেলানিনের অত্যধিক উৎপাদনের কারনে চোখের নীচে কালো দাগ তৈরি হয়।
  • থাইরয়েড রোগের কারনে চোখের নিচে কালো দাগ সৃষ্টি হতে পারে।
  • আয়রনের অভাবজনিত রোগের লক্ষন হিসেবে এ সমস্যা দেখা দেয়।
  • বিশেষ কোন চর্মরোগের কারনে এমন হয়।
  • ক্যান্সার, HIV ইত্যাদি বড় রোগের প্রভাবে শরীরের অনেক ক্ষতিসাধন হয়। এতে শরীর দূর্বল ও ত্বক ফ্যাকাশে, ররক্তস্বল্পতা ও চোখের নিচে কালো দাগ সৃষ্টি হয়।

চোখের নিচের কালো দাগ দূর করার উপায়।

বিভিন্ন ওষুধ, ক্রিম ব্যবহার করে অথবা ঘরোয়া উপায়ে চোখের নিচে কালো দাগ দূর করা যায়। যেমন-

পর্যাপ্ত ঘুম- প্রতিদিন কমপক্ষে ৬-৮ ঘন্টা ঘুমালে চোখের নিচসহ চেহারার ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি পায় এবং কালো দাগ দূর হয়। 

পর্যাপ্ত পানি পান- নিয়মিত পরিমান মতো পানি পান করলে শরীরের অভ্যন্তরীণ সকল ক্রিয়া ভালোভাবে সম্পন্ন হয়। ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ে ও চোখের নিচের কালো দাগ দূর হয়। 

পুষ্টিকর খাবার গ্রহন- রক্তস্বল্পতা, অপুষ্টি, আয়রনের অভাব, ভিটামিন সি এবং কে এর অভাবে চোখের নিচে কালো দাগ হয়। তাই এই সকল পুষ্টিগুন সম্পন্ন খাবার গ্রহন করতে হবে।

শশা- ত্বকের সার্বিক উন্নতিতে শশার ব্যবহার অনেক বেশি করা হয়। শশার রস তুলোয় ভিজিয়ে অথবা শশা গোল ও মোটা করে কেটে দুই চোখের উপর ১০-১৫ মিনিট রাখতে হবে। তারপর ধুয়ে নিতে হবে। কিছুদিনের মধ্যেই সম্পূর্ণ দাগ দূর হবে।

টমেটো ও লেবুর রস- টমেটো ও লেবুর রস একসাথে মিশিয়ে কিছুটা তুলোয় ভিজিয়ে চোখের উপর রেখে দিতে হবে। ১০-১৫ মিনিট পর তা ধুয়ে নিলে ভালো ফলাফল পাওয়া যায়।

আলুর মাস্ক- আলুর রস তুলোয় ভিজিয়ে অথবা আলু গোল করে কেটে চোখের উপর কিছুক্ষন রেখে ধুয়ে ফেললে ধীরে ধীরে চোখের নিচের দাগ দূর হয়ে যায়।

Under Eye Gel- আশেপাশের ফার্মেসীতে চোখের নিচের কালো দাগ দূর করার জন্য অনেক ক্রিম বা জেল পাওয়া যায়। ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী অল্প কিছুদিন ব্যবহার করলেই ভালো ফল পাওয়া যায়।

সঠিক লাইফস্টাইল মেইনটেইন করার মাধ্যমে চোখের নিচে কালো দাগ দূর করর চেহারাকে অনেক সৌন্দর্যমন্ডিত করা যায়।

চোখের নিচে কালো দাগ কেন হয় ও কোন রোগের লক্ষন সে সম্পর্কিত জিজ্ঞাসিত প্রশ্নোত্তর (FAQ's)

চোখের নিচে কালো দাগ কেন হয়?

জেনেটিক্স, নিদ্রাহীনতা, বার্ধক্য, ডিহাইড্রেশন, অ্যালার্জি, সূর্যের এক্সপোজার, অপুষ্টিজনিত কারন এবং থাইরয়েড রোগ, আয়রনের অভাব, চর্মরোগ দীর্ঘস্থায়ী বিভিন্ন বড় রোগের প্রভাবে চোখের নিচে কালো দাগ হয়।

চোখের নিচের কালো দাগ কিভাবে দূর করা যায়?

শরীর এবং চেহারার প্রতি যত্নশীল হওয়ার পাশাপাশি নিয়মিত পর্যাপ্ত ঘুম ও পানি পান, স্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহন এবং শশা, টমেটো, লেবু, আলু ও বিভিন্ন ক্রিম ব্যবহার করে চোখের নিচের কালো দাগ দূর করা যায়।

ডার্ক সার্কেল কি?

চোখের নিচের কালো দাগকে ডার্ক সার্কেল বলা হয়। বিভিন্ন মানসিক চাপ, জেনেটিক্স, নিদ্রাহীনতা, বার্ধক্য, ডিহাইড্রেশন ও স্থায়ী রোগের প্রভাবে এমনটি হয়।

এই আর্টিকেল গুলো পড়ুন।

গুরুত্বপূর্ণ কথা।

চোখের নিচের কালো দাগ আমাদের শরীরের দূর্বলতা, ক্ষতির পরিচয় বহন করে এবং আমাদের বাহ্যিক সৌন্দর্য অনেকাংশেই কমিয়ে দেয়। তাই চোখের নিচে কালো দাগ কেন হয় ও কোন রোগের লক্ষন সে সম্পর্কে সঠিক ধারনা নিয়ে নিজের ত্বকের ও স্বাস্থ্যের যত্ন নিতে হবে। 

এই পোস্টে জানতে পারলাম- চোখের নিচে কালো দাগ কেন হয় ও কোন রোগের লক্ষন এবং কালো দাগ দূর করার উপায় সম্পর্কে বিস্তারিত। পোস্টটি ভালো লাগলে বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করুন এবং কমেন্ট করে জানান। স্বাস্থ্য বিষয়ক এমন সব উপকারী লেখা পেতে ভিজিট করুন আমাদের ওয়েবসাইট।