সোডিয়াম পটাশিয়াম কমে গেলে কি হয় ও সোডিয়াম পটাশিয়াম জাতীয় খাবার।

আপনার দেহে কি সোডিয়াম পটাশিয়াম স্বল্পতা রয়েছে। তাহলে তা বুঝার উপায় কি এবং কি খেলে শরীরে সোডিয়াম ও পটাসিয়াম বৃদ্ধি পাবে। চলুন এই পোস্টের মাধ্যমে জেনে নেই সোডিয়াম পটাশিয়াম কমে গেলে কি হয় ও সোডিয়াম পটাশিয়াম জাতীয় খাবার কি কি সে সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য।

সোডিয়াম এবং পটাসিয়াম দুটি অপরিহার্য খনিজ। সোডিয়াম তরল ভারসাম্য, পেশী ফাংশন এবং স্নায়ুর কার্যকারিতা নিয়ন্ত্রণ করে এবং পটাসিয়াম হৃদযন্ত্রের কার্যক্ষমতা ও দেহের অন্যান্য কাজে সহায়তা করে। এবার সোডিয়াম পটাশিয়াম কমে গেলে কি হয় ও সোডিয়াম পটাশিয়াম জাতীয় খাবার কি কি তা জেনে নেই-

সোডিয়াম পটাশিয়াম কমে গেলে কি হয় ও সোডিয়াম পটাশিয়াম জাতীয় খাবার।

শরীরে সোডিয়াম কমে গেলে কি হয়।

শরীরে সোডিয়ামের পরিমান কমে গেলে তাকে হাইপোনাট্রেমিয়া বলা হয়। এটি বিভিন্ন কারনে হতে পারে,যেমন- অতিরিক্ত পানি খাওয়া, কিছু ওষুধ কারনে বা কিডনি ফেইলিউর, ফুসফুসের ক্যান্সারের কারনে। শরীরে সোডিয়ামের স্বাভাবিক ১৪০ মিলিগ্রাম/ডিএল। যখন তা এর থেকে কমে যায় তখন শরীরে বিভিন্ন প্রভাব পড়ে। যেমন-

১) বমি বমি ভাবঃ- কম সোডিয়াম বমি বমি ভাব, বমি হওয়া এবং পেটে ব্যথা হতে পারে।

২) মাথাব্যথাঃ- শরীরে কম সোডিয়াম মাথাব্যথার কারন হতে পারে। কিছু কিছু তা খুবই মারাত্বক আকার ধারন করে।

৩) ক্লান্তিঃ- সোডিয়ামের অভাবে শরীর খুব ক্লান্ত লাগে। শরীর ঝিমঝিম করে এবং কাজে অলসতা দেখা যায়। এবং পেশী ক্যাম্পস হয়ে শরীরে দূর্বলতা অনুভূত হয়। 

৪) বিভ্রান্তিঃ- সোডিয়ামের স্বল্পতার কারনে ব্রেনসেল গুলো সঠিকভাবে কাজ করে না। এতে মস্তিষ্কের কার্যকারিতাকে প্রভাবিত হয়। যার ফলে বিভ্রান্তি, অস্থিরতা এবং কিছু কিছু ক্ষেত্রে খিঁচুনি হতে পারে।

শরীরে পটাশিয়াম কমে গেলে কি হয়।

শরীরে পটাসিয়াম কম হলে তাকে হাইপোক্যালেমিয়া বলা হয়। বমি, ডায়রিয়া, অত্যধিক ঘাম বা খুব বেশি ওষুধের ব্যবহার ইত্যাদি বিভিন্ন কারনে এ সমস্যা হয়। যখন শরীরে পটাসিয়ামের মাত্রা স্বাভাবিক সীমার নিচে নেমে যায়, যেমন- ৩.৫-৫ মিলিগ্রাম/ডিএল তখন এটি বিভিন্ন উপসর্গ সৃষ্টি করে। যেমন-

১) পেশীর দুর্বলতাঃ- শরীরে পটাশিয়াম কমে গেলে পেশীতে দুর্বলতা সৃষ্টি হয়। যার ফলে হাঁটা, সিঁড়ি বেয়ে ওঠা এবং জিনিস তোলা সহ দৈনন্দিন কাজকে প্রভাবিত করে।

২) অস্বাভাবিক হার্ট বিটঃ- শরীরে কম পটাসিয়াম উচ্চ হৃদস্পন্দন, অনিয়মিত হৃদস্পন্দন এবং গুরুতর ক্ষেত্রে কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট সহ অস্বাভাবিক হৃদযন্ত্রের ছন্দ সৃষ্টি করে যা খুবই মারাত্বক।

৩) কোষ্ঠকাঠিন্যঃ- পটাসিয়ামের মাত্রা কম হলে পরিপাকতন্ত্রের পেশীকে প্রভাবিত করতে পারে, যার ফলে কোষ্ঠকাঠিন্য হয়।

৪) অসাড়তা ও কাপুনিঃ- কম পটাসিয়াম স্নায়ুর কার্যকারিতাকে প্রভাবিত করতে পারে, যার ফলে অঙ্গে অসাড়তা অনুভূত হয় এবং মাঝে মাঝে শরীরে কাপুনি দেখা দিতে পারে।

এর থেকে রক্ষা পেতে হলে আমাদের জানতে হবে সোডিয়াম পটাশিয়াম কমে গেলে কি হয় ও সোডিয়াম পটাশিয়াম জাতীয় খাবার গুলো সম্পর্কে।

সোডিয়াম পটাশিয়াম জাতীয় খাবার।

সোডিয়াম এবং পটাসিয়াম হল দুটি গুরুত্বপূর্ণ ইলেক্ট্রোলাইট। প্রতিদিন ৩৫০০ মিলিগ্রাম পটাশিয়াম ও ৩০০ মিলিগ্রাম সোডিয়াম প্রয়োজন একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের শরীরের কার্য পরিচালনার জন্য। তবে খেয়াল রাখতে হবে কম সোডিয়াম থাকার চেয়ে বেশি সোডিয়াম থাকা শরীরের জন্য অনেক মারাত্বক। 

আমরা জানলাম সোডিয়াম পটাশিয়াম কমে গেলে কি হয় ও সোডিয়াম পটাশিয়াম জাতীয় খাবার তালিকা সম্পর্কে চলুন জেনে নেই- 

১) কলাঃ- কলা পটাশিয়ামের একটি চমৎকার উৎস এবং এতে অল্প পরিমানে সোডিয়ামও রয়েছে।

২) মিষ্টি আলুঃ- মিষ্টি আলু পটাসিয়াম ও সোডিয়াম উভয়েরই একটি বড় উৎস। মিষ্টি আলুতে ফ্যাট কম থাকে। একটি মাঝারি আকারের মিষ্টি আলুতে প্রায় ৫৪০ মিলিগ্রাম পটাশিয়াম থাকে ও কিছু পরিমান সোডিয়াম থাকে।

৩) পালং শাকঃ- পালং শাক একটি সবুজ ও পুষ্টিগুণ সম্পন্ন শাক। এতে পটাসিয়াম বেশি এবং সোডিয়াম কম থাকে যা স্বাস্থ্যকর।

৪) টমেটোঃ- টমেটো কোলেস্টেরলমুক্ত একটি সবজি। টমেটোতে পটাসিয়াম ও সোডিয়ামের পাশাপাশি ভিটামিন, ক্যালসিয়াম, প্রোটিন, শর্করা, ম্যাগনেসিয়াম ও পাওয়া যায়। প্রতি ১০০ গ্রাম টমেটোতে ২৩৭ মিলিগ্রাম পটাসিয়াম এবং ৫ মিলিগ্রাম সোডিয়াম থাকে।

৫) মটরশুটিঃ- বিভিন্ন ধরনের মটরশুঁটি যেমন- কালো মটরশুটি, নেভি মটরশুটি, এবং কিডনি মটরশুটিতে উচ্চ মাত্রায় পটাসিয়াম এবং কিছু পরিমান সোডিয়াম আছে।

৬) দইঃ- দই পটাসিয়াম এবং সোডিয়াম উভয়েরই একটি ভাল উৎস। এছাড়াও দইয়ে ম্যাগনেসিয়াম, ভিটামিন বি-২ ও বি-১২ এবং ক্যালসিয়াম থাকে। সম্পূর্ন দুধ থেকে তৈরি দই শরীর ঠান্ডা থাকে ও হজমে সহায়তা করে।

৭) স্যামনঃ- সালমন পটাসিয়াম এবং সোডিয়াম উভয়েরই ভালো উৎস, সেইসাথে অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টি যেমন ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড ও পাওয়া যায়।

৮) বাদামঃ- বাদামে ক্যালরি, প্রোটিন, ফ্যাট, ভিটামিন ই, ম্যাগনেসিয়াম, ফসফরাস, পটাসিয়াম ও সোডিয়াম পাওয়া যায়। বিশেষ কাজু প্রচুর পরিমাণে পটাসিয়াম থাকে এবং এতে কিছু সোডিয়ামও থাকে।

৯) কুমড়োঃ- কুমড়ো পটাসিয়ামের একটি ছোটখাটো রাজধানী। এবং এতে সোডিয়াম ও রয়েছে।

১০) দানাজাতীয় খাবারঃ- দানাজাতীয় খাবার ও বিভিন্ন শস্যের বীজে পটাসিয়াম ও সোডিয়াম পাওয়া যায়।

উপরোক্ত আলোচনায় জানতে পারলাম সোডিয়াম পটাশিয়াম কমে গেলে কি হয় ও সোডিয়াম পটাশিয়াম জাতীয় খাবার সম্পর্কে বিস্তারিত। 

এই আর্টিকেল গুলো পড়ুন।

সোডিয়াম পটাশিয়াম সম্পর্কে সচরাচর জিজ্ঞেসিত প্রশ্নোত্তর।

সোডিয়াম পটাশিয়াম জাতীয় খাবার কি কি?

কলা, মিষ্টি আলু, পালংশাক, মটরশুঁটি, টমেটো, দই, স্যামন, বাদাম, কুমড়ো ও বিভিন্ন দানাজারীয় শস্যে ভালো পরিমানে সোডিয়াম ও পটাসিয়াম পাওয়া যায়।

দৈনিক কতটুকু সোডিয়াম জাতীয় খাবার খেতে হবে?

সুস্থ দেহের জন্য দৈনিক ৩০০ মিলিগ্রাম সোডিয়াম জাতীয় খাবার গ্রহন করতে হবে।

দৈনিক কতটুকু পটাসিয়াম জাতীয় খাবার খেতে হবে?

দেহের সুস্থতার জন্য প্রতিদিন ৩৫০০ মিলিগ্রাম পটাশিয়াম জাতীয় খাবার খেতে হবে।

সোডিয়াম কমানোর উপায় কি?

দেহের সোডিয়াম কমাতে লবনের পরিবর্তে লেবুর রস ও ভেষজ উপাদান ব্যবহার করতে হবে এবং নিয়মিত ব্যায়াম করতে হবে। এতে অতিরিক্ত সোডিয়াম ঘামের মাধ্যমে শরীর থেকে বেড়িয়ে যায়।

গুরুত্বপূর্ণ কথা।

উপরোক্ত আলোচনার উপসর্গগুলির মধ্যে কোনটি অনুভব হলে সেই কারণটি নির্ধারণ করে এবং উপযুক্ত চিকিৎসা গ্রহণের জন্য ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া অপরিহার্য।

আজকের আলোচনার মূল বিষয় ছিলো সোডিয়াম পটাশিয়াম কমে গেলে কি হয় ও সোডিয়াম পটাশিয়াম জাতীয় খাবার সম্পর্কে বিস্তারিত। পোস্টটি ভালো লাগলে বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করুন। পোস্টটি কেমন লাগলো তা কমেন্ট করে জানাতে ভূলবেন না, ধন্যবাদ।

এই আর্টিকেল গুলো পড়ুন।