বিসমিল্লাহ- ইসলাম কি, জানতে হলে প্রথমে আমাদেরকে চারটি আরবি শব্দের অর্থ জানতে হবে। (১) মিল্লাত, (২) দ্বীন, (৩) মুসলিম ও (৪) ইসলাম এই চারটি আরবি শব্দের অর্থ জানার মাধ্যমে ইসলাম কি, এই বিষয়টি আমাদের কাছে পরিস্কার হয়ে যাবে ইনশাল্লাহ।
মিল্লাত শব্দের অর্থ।
ইসলাম কি জানতে হলে মিল্লাত শব্দের অর্থ জানা প্রয়োজন। কারণ আমরা সকলে জানি ও মানী যে আমাদের ধর্মের নাম ইসলাম। যেহেতু ধর্মের নাম ইসলাম, তাই ধর্মের আরবি জানা প্রয়োজন। মিল্লাত শব্দের অর্থ- ধর্ম।
দ্বীন শব্দের অর্থ।
আমরা ওয়াজ মাহফিলে এই দ্বীন কথাটি প্রায় শুনে থাকি, কিন্ত আমরা বাংলা ভাষার যে দিন ব্যবহার করি, আরবি দ্বীন থেকে সম্পূর্ণ আলাদা। আরবি দ্বীন শব্দের অর্থ- বিচার। আরও স্বচ্ছ ধারণা দেওয়ার জন্য নীচে নকশা দেওয়া হল।
মুসলিম শব্দের অর্থ।
মুসলিম শব্দের অর্থ- আত্মসমর্পণ। আল্লাহর সমস্ত নির্দেশের প্রতি আনুগত্য করার মাধ্যমে একনিষ্ঠার সঙ্গে সমস্ত কাজ সম্পাদন করাকে আত্মসমর্পণকারী বলে। অর্থাৎ ওই ব্যক্তিকে মুসলিম বলে।
ইসলাম শব্দের অর্থ।
আমরা প্রায় সকলেই জানি ইসলাম শব্দের অর্থ- শান্তি। কিন্ত আমাদের ইসলাম সম্পর্কে যে ধারণা হয়ে আছে, ওই ধারণা দূর করে, ইসলাম সম্পর্কে কিতাবের দৃষ্টিতে সঠিক ধারণা উপস্থাপন করা আমাদের লক্ষ্য। নীচে বিস্তারিত আলোচনা করা হল।
ইসলাম কি আমাদের ধর্মের নাম?
এখন আমরা আলোচনা করবো মিল্লাত নিয়ে অর্থাৎ ধর্ম নিয়ে। ধর্ম নিয়ে আলোচনা করার কারণ হল, আমরা মনে করি আমাদের ধর্মের নাম ইসলাম। আর এটা মনে করাও স্বাভাবিক, কারণ মুসলিম সহ পুরো বিশ্ববাসীর কাছেও মুসলিমদের ধর্ম, ইসলাম নামে পরিচিত। এ ছাড়াও এই নামটি সরকারী ভাবেও স্ককৃত।
সে যাইহোক এখন আমরা, আমাদের ধর্মগ্রন্থ আল-কুরআন থেকে জানার চেষ্টা করবো আমাদের ধর্মের নাম কি?
১৬ নম্বর সূরা আন-নাহল ১২৩ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে- "তারপর আমি তোমার প্রতি ওহী পঠিয়েছি যে, তুমি ইবরাহীমের ধর্মের অনুসরণ কর, যে ছিল একনিষ্ঠ এবং ছিল না মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত।"
এই আয়াতে আল্লাহ ওহী পাঠিয়ে আদেশ করছেন যে তুমি ইবরাহীমের ধর্মের অনুসরণ কর। চলুন আর একটি আয়াত দেখে নেওয়া হক।
৩ নম্বর সূরা আলে-ইমরান ৯৫ নম্বর আয়াতে কি বলা হয়েছে দেখুন- "বল, ‘আল্লাহ সত্য বলেছেন। সুতরাং তোমরা ইবরাহীমের ধর্মের অনুসরণ কর একনিষ্ঠভাবে। আর সে মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত ছিল না’।"
এই আয়াতে, আল্লাহ বলছেন যে- বল আল্লাহ সত্য বলেছেন। এখানে বল আল্লাহ সত্য বলেছেন, এই কথাটা আল্লাহর বলা কেন প্রয়োজন হলে? কারণ আমরা মনে করি আমাদের ধর্মের নাম ইসলাম। তাই আমাদের এই বিচারকে পরিবর্তন করার জন্য আল্লাহ বলেছেন যে- "বল, ‘আল্লাহ সত্য বলেছেন। সুতরাং তোমরা ইবরাহীমের ধর্মের অনুসরণ কর একনিষ্ঠভাবে। আর সে মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত ছিল না’।"
এখন আমাদের মনে দুটি প্রশ্ন জাগতে পারে।
- ইবরাহীম (আ:) এর ধর্মের নাম কি?
- যদি আমাদের ধর্মের নাম ইসলাম না হয়। তাহলে ইসলাম কি?
ইবরাহীম (আ:) এর ধর্মের নাম কি?
প্রথম প্রশ্নের উত্তর- ইবরাহীম (আ:) এর ধর্মের নাম কি? এর উত্তরে আল-কুরআনের একটি আয়াত দেখে নেওয়া হক। ৩ নম্বর সূরা আল-ইমরান ৬৭ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে যে-
"ইবরাহীম ইয়াহূদীও ছিল না, নাসারাও ছিল না; বরং সে ছিল একনিষ্ঠ মুসলিম (আত্মসমর্পণকারী)। আর সে মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত ছিল না।"
উপরোক্ত আয়াত থেকে জানতে পারলাম যে- আমরা ইবরাহীম (আ:) এর ধর্মের অনুসরণ করছি, আর ইবরাহীম (আ:) ছিলেন একনিষ্ঠ ভাবে আত্মসমর্পণকারী। আর উনি ইয়াহূদীও ছিল না, নাসারাও ছিল না; বরং সে ছিল একনিষ্ঠ মুসলিম (আত্মসমর্পণকারী)। আর সে মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত ছিল না।
ইসলাম কি?
দ্বিতীয় প্রশ্নের উত্তর- যদি আমাদের ধর্মের নাম ইসলাম না হয়, তাহলে ইসলাম কি? এই প্রশ্নের উত্তরটি হচ্ছে আমাদের আর্টিকেলের মূল অংশ। তাই এখন আমরা মূল আলোচনার দিকে এগিয়ে যাবো।
আমরা প্রথমের দিকে জেনেছি আরবি দ্বীন শব্দের অর্থ- বিচার। এখন আমরা এই দ্বীন বা বিচার কি, তা নিয়ে বিশ্লেষণ করবো। বিচার কথাটা সাধারণত দুটি ভাবে ব্যবহার করা হয়।
প্রথম- পারিবারিক বা সামাজিক কোন সমস্যা হলে নালিশ বসানো হয়। আর বাদী, বিবাদী দুই পক্ষের কথা শুনে সমস্যার সঠিক সমাধান করা হয়। এই সঠিক সমাধান করা কে আরবিতে দ্বীন আর বাংলাতে বিচার বলা হয়।
দ্বিতীয়- আবার কোন ব্যক্তির আচার আচরণ, কথাবার্তা, চলাফেরা, দৃষ্টিভঙ্গি ভালো হলে, বলা হয় যে- ওই ব্যক্তির বিচার খুব ভালো। এই দুই ভাবে বিচার কথাটি ব্যবহার করা হয়।
আল-কুরআনের মধ্যেও বিচার কথাটি দুই ভাবে ব্যবহার করা হয়েছে। এক নম্বর- কিয়ামতের দিনে যে ফলাফল প্রকাশ করা হবে, সেই দিন কারও প্রতি যুলুম করা হবে না, ছোট বড় সমস্ত কর্মের ফল সম্পূর্ণ দেওয়া হবে। আর এই সঠিক ফলাফলের দিনকে বিচার দিন বলা হয়েছে।
দুই নম্বর- আল-কুরআনের মধ্যে যে নিয়মের কথা গুলো বলা হয়েছে, যে উপদেশ গুলো দেওয়া হয়েছে, যে পথ নির্দেশ করা হয়েছে, যে আদর্শ শিখানো হয়েছে, যে কর্মগুলি নিষেধ করা হয়েছে, যে খাদ্য গুলো হারাম করা হয়েছে, কুরআনের মধ্যে যে দৃষ্টিভঙ্গি উপস্থাপন করা হয়েছে, এই সব বিষয়কে বিচার বলা হয়েছে। অর্থাৎ আল-কুরআনের বিচারকে আরবিতে দ্বীন বলা হয়েছে।
আশাকরি আরবি দ্বীন শব্দের অর্থ- বিচার বিষয়টি আমাদের কাছে পরিষ্কার হয়েছে। আর ইসলাম শব্দটির অর্থ আমরা সকলেই জানি যে- শান্তি। এখন দ্বীন ও ইসলাম অর্থাৎ বিচার ও শান্তি সম্পর্কে কিছু আল-কুরআনের আয়াত দেখে নেওয়া হক।
৫ নম্বর সূরা আল-মায়িদাহ ৩ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে--- "তোমাদের জন্য হারাম করা হয়েছে মৃত প্রাণী, রক্ত ও শূকরের গোশত এবং যা আল্লাহ ভিন্ন কারো নামে যবেহ করা হয়েছে; গলা চিপে মারা জন্তু, প্রহারে মরা জন্তু,
উঁচু থেকে পড়ে মরা জন্তু অন্য প্রাণীর শিঙের আঘাতে মরা জন্তু এবং যে জন্তুকে হিংস্র প্রাণী খেয়েছে- তবে যা তোমরা যবেহ করে নিয়েছ তা ছাড়া, আর যা মূর্তি পূঁজার বেদিতে বলি দেয়া হয়েছে এবং জুয়ার তীর দ্বারা বণ্টন করা হয়, এগুলো গুনাহ। যারা কুফরী করেছে, আজ তারা তোমাদের বিচারের ব্যাপারে হতাশ হয়ে পড়েছে। সুতরাং তোমরা তাদেরকে ভয় করো না, বরং আমাকে ভয় কর।
আজ আমি তোমাদের জন্য তোমাদের বিচারকে পূর্ণ করলাম এবং তোমাদের উপর আমার নিআমত সম্পূর্ণ করলাম এবং তোমাদের জন্য বিচার হিসেবে পছন্দ করলাম শান্তি। তবে যে তীব্র ক্ষুধায় বাধ্য হবে, কোন পাপের প্রতি ঝুঁকে নয় (তাকে ক্ষমা করা হবে), নিশ্চয় আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।"
এই আয়াতে আল্লাহ বলছেন যে- তোমাদের জন্য বিচার হিসেবে পছন্দ করলাম শান্তি।
৩ নম্বর সূরা আলে-ইমরান ৮৫ নম্বর আয়াত বলা হয়েছে---- "আর যে শান্তি ছাড়া অন্য কোন বিচার চায় তবে তার কাছ থেকে তা কখনো গ্রহণ করা হবে না এবং সে আখিরাতে ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হবে।"
অর্থাৎ ব্যক্তি জীবনে, পরিবারে, কর্মক্ষেত্রে, সমাজে, ও দেশে শান্তি বজায় রাখার জন্য বা শান্তি বৃদ্ধির লক্ষ্যে, যে কাজ করা হয় ওই সমস্ত কাজ আল্লাহর নিকট গ্রহণ যোগ্য। শান্তি ছাড়া অন্য কোনো উদ্দেশ্য কাজ করা হলে, সেই কাজ আল্লাহর নিকট গ্রহণ হবে না।
(পৃথিবীতে আমাদের প্রথম উদ্দেশ্য হবে শান্তি অর্জন করা। আল-কুরআনে যে বিচারের কথা বলা হয়েছে, ওই বিচারের মাধ্যমে শান্তি অর্জন করতে হবে। তাহলে কিয়ামতের দিনেও সফলতা পাওয়া যাবে।)
২ নম্বর সূরা আল-বাকারা ২০৮ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে---- "হে মুমিনগণ, তোমরা শান্তির মধ্যে পূর্ণরূপে প্রবেশ কর এবং শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করো না । নিশ্চয় সে তোমাদের জন্য স্পষ্ট শত্রু।"
অর্থাৎ আমাদেরকে কোন সময় অশান্তি মূলক আচরণ করা চলবে না। সকল ক্ষেত্রে শান্তির জন্য কাজ করতে হবে।
আমরা ইসলাম সম্পর্কে অনেক কথাই শুনে থাকি। কিন্ত আমাদের কে সকল ক্ষেত্রে মনে রাখতে হবে যে ইসলাম এর অর্থ শান্তি। আর আল-কুরআনের মধ্যে যে বিচারের কথা গুলো এসেছে, ওই বিচার কে আল-কুরআনের ভাষায় শান্তি বলা হয়েছে।
আমাদের নিকট কিতাবের জ্ঞান আসার পরই আমরা মতানৈক্য করেছি, পরস্পর বিদ্বেষবশত। ইবরাহীম (আঃ) এর ধর্মকে বানিয়েছি ইসলাম। আর আল-কুরআনের বিচারকে বানিয়েছি ধর্ম। আর সমাজে সমাজে শান্তির পরিবর্তে নিয়ে এসেছি অশান্তি।
৩ নম্বর সূরা আলে-ইমরান ১৯ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে--- "নিশ্চয় আল্লাহর নিকট বিচার হচ্ছে শান্তি। আর যাদেরকে কিতাব দেয়া হয়েছে, তাদের নিকট জ্ঞান আসার পরই তারা মতানৈক্য করেছে, পরস্পর বিদ্বেষবশত। আর যে ব্যক্তি আল্লাহর আয়াতসমূহের সাথে কুফরী করে, নিশ্চয় আল্লাহ হিসাব গ্রহণে দ্রুত।"
এই বইটির মাধ্যমে এটাই বুঝানোর চেষ্টা করা হয়েছে যে- আমাদের ধর্মের নাম ইসলাম নয়। আমরা ইবরাহীম (আঃ) এর ধর্মের অনুসরণকারী। আর কুরআনের বিচারকে ইসলাম বলা হয়েছে। অর্থাৎ শান্তি বলা হয়েছে।
আর্টিকেলটি পড়ার জন্য ধন্যবাদ।। নতুন আর্টিকেলের নোটিফিকেশন পেতে টেলিগ্রাম চ্যানেল Join করুণ। কোন প্রশ্ন, কোন অভিযোগ বা কিছু মতামত থাকলে কমেন্ট করুণ।
0 $type={blogger}