হাদিস সম্পর্কে সাধারণ জ্ঞান, এই আর্টিকেলের মাধ্যমে কুরআন থেকে "হাদিস" সম্পর্কে কিছু সাধারণ জ্ঞান অর্জন করব ইনশাল্লাহ।
কুরআন থেকে "হাদিস" সম্পর্কিত যে আয়াত গুলো আছে, ওই আয়াত গুলো আপনাদের সঙ্গে আলোচনা করব। আশাকরি এই আয়াত গুলো থেকে জ্ঞান অর্জন করবেন ইনশাল্লাহ।
আপনাদের কাছে আমাদের অনুরধ থাকবে, যে আয়াত গুলো আলোচনা করা হবে, ওই আয়াত গুলোকে নিয়ে চিন্তা ভাবনা করবেন। এতে সঠিক বিষয় বুঝতে সুবিধা হবে।
হাদিস কয়টি ও কি কি।
বর্তমান পরিস্থিতি আর কুরআনের কিছু আয়াতের উপর নির্ভর হয়ে হাদিসকে সাধারণত দুটি ভাগে ভাগ করা যাই। যেমন- ১) আল্লাহ্ ও রসূলের হাদিস। ২) মানুষের লিখা হাদিস।
আল্লাহ্ ও রসূলের হাদিস বলতে এখানে বুঝিয়েছি আল-কুরআনকে। আর মানুষের লিখা হাদিস বলতে বুঝিয়েছি সমস্ত হাদিস গ্রন্থকে।
তাই নীচে কুরআন থেকে কিছু আয়াত আলোচনা করা হল, এই আয়াতের মাধ্যমে আল্লাহ্ ও রসূল, হাদিস সম্পর্কে কি বলে দেখুন।
বিশুদ্ধ হাদিস গ্রন্থ কোনটি।
মানুষের লিখা হাদিস গ্রন্থ সম্পর্কে আল্লাহ্ ও রসূল কি বলে দেখুন।
২-সুরা আল-বাকারা / আয়াত-৭৯
فَوَیۡلٌ لِّلَّذِیۡنَ یَکۡتُبُوۡنَ الۡکِتٰبَ بِاَیۡدِیۡهِمۡ ٭ ثُمَّ یَقُوۡلُوۡنَ هٰذَا مِنۡ عِنۡدِ اللّٰهِ لِیَشۡتَرُوۡا بِهٖ ثَمَنًا قَلِیۡلًا ؕ فَوَیۡلٌ لَّهُمۡ مِّمَّا کَتَبَتۡ اَیۡدِیۡهِمۡ وَ وَیۡلٌ لَّهُمۡ مِّمَّا یَکۡسِبُوۡنَ
ফাওয়াইলুল লিল্লাযীনা ইয়াকতুবূনাল কিতা-বা বিআইদীহিম ছু ম্মা ইয়াকূলূনা হা-যা-মিন ‘ইনদিল্লা-হি লিইয়াশতারূ বিহী ছামানান কালীলান ফাওয়াইলুল্লাহুম মিম্মা-কাতাবাত আইদিহিম ওয়া ওয়াইলুল্লাহুম মিম্মা-ইয়াকছিবূন।
সুতরাং ধ্বংস তাদের জন্য যারা নিজ হাতে কিতাব লিখে। তারপর বলে, ‘এটি আল্লাহর পক্ষ থেকে’, যাতে তা তুচ্ছ মূল্যে বিক্রি করতে পারে। সুতরাং তাদের হাত যা লিখেছে তার পরিণামে তাদের জন্য ধ্বংস, আর তারা যা উপার্জন করেছে তার কারণেও তাদের জন্য ধ্বংস।
এই আয়াত থেকে বুঝাজাই যে- মানুষ নিজ হাতে কিতাব লিখেছে, এর পর হাদিসের নাম দিয়ে বিক্রি করে, কিছু টাকার জন্য।
৩১-সুরা লুকমান / আয়াত-৬
وَ مِنَ النَّاسِ مَنۡ یَّشۡتَرِیۡ لَهۡوَ الۡحَدِیۡثِ لِیُضِلَّ عَنۡ سَبِیۡلِ اللّٰهِ بِغَیۡرِ عِلۡمٍ ٭ۖ وَّ یَتَّخِذَهَا هُزُوًا ؕ اُولٰٓئِکَ لَهُمۡ عَذَابٌ مُّهِیۡنٌ
ওয়া মিনান্না-ছি মাইঁ ইয়াশতারী লাহওয়াল হাদীছিলিইউদিল্লা ‘আন ছাবীলিল্লা-হি বিগাইরি ‘ইলমিওঁ ওয়া ইয়াত্তাখিযাহা-হুঝুওয়ান উলাইকা লাহুম ‘আযা-বুম মুহীন।
আর মানুষের মধ্য থেকে কেউ কেউ না জেনে আল্লাহর পথ থেকে মানুষকে বিভ্রান্ত করার জন্য খারাপ হাদিস ক্রয় করে, আর তারা ঐগুলোকে হাসি-ঠাট্টা বিদ্রূপ হিসেবে গ্রহণ করে; তাদের জন্য রয়েছে লাঞ্ছনাকর আযাব।
উপরের আয়াত থেকে আমরা জেনেছি যে মানুষ নিজ হাতে কিতাব লিখে আর আল্লাহ্ নাম দিয়ে বিক্রি করে।
আর এই আয়াত থেকে জানলাম যে- কিছু মানুষ না যেনে ওই মানুষের লিখা হাদিস গুলো ক্রয় করে। আর আল্লাহ্ এই হাদিস গুলোকে খারাপ হাদিস বলে পরিচয় দিয়েছেন।
এই হল এক প্রকার খারাপ হাদিস যা মানুষের লিখা।
এবার আসুন আল-কুরআনকে আল্লাহ্ ও রসূলের হাদিস কেন বললাম।
৩৯-সূরা আয-যুমার / আয়াত-২৩
اَللّٰهُ نَزَّلَ اَحۡسَنَ الۡحَدِیۡثِ کِتٰبًا مُّتَشَابِهًا مَّثَانِیَ ٭ۖ تَقۡشَعِرُّ مِنۡهُ جُلُوۡدُ الَّذِیۡنَ یَخۡشَوۡنَ رَبَّهُمۡ ۚ ثُمَّ تَلِیۡنُ جُلُوۡدُهُمۡ وَ قُلُوۡبُهُمۡ اِلٰی ذِکۡرِ اللّٰهِ ؕ ذٰلِکَ هُدَی اللّٰهِ یَهۡدِیۡ بِهٖ مَنۡ یَّشَآءُ ؕ وَ مَنۡ یُّضۡلِلِ اللّٰهُ فَمَا لَهٗ مِنۡ هَادٍ
আল্লা-হু নাঝঝালা আহছানাল হাদীছিকিতা-বাম মুতাশা-বিহাম মাছা-নিয়া তাকশা‘ইররু মিনহু জূলূদুল্লাযীনা ইয়াখশাওনা রাব্বাহুম ছু ম্মা তালীনুজুলূদুহুম ওয়াকু লূবুহুম ইলা-যিকরিল্লা-হি যা-লিকা হুদাল্লা-হি ইয়াহদী বিহী মাইঁ ইয়াশাউ ওয়া মাইঁ ইউদলিলিল্লা-হু ফামা-লাহূমিন হা-দ।
আল্লাহ নাযিল করেছেন উত্তম হাদিস, সাদৃশ্যপূর্ণ একটি কিতাব, যা বারবার আবৃত্তি করা হয়। যারা তাদের রবকে ভয় করে, তাদের গা এতে শিহরিত হয়, তারপর তাদের দেহ ও মন আল্লাহর স্মরণে বিনম্র হয়ে যায়। এটা আল্লাহর হিদায়াত, তিনি যাকে চান তাকে এর দ্বারা হিদায়াত করেন। আর আল্লাহ যাকে পথভ্রষ্ট করেন, তার জন্য কোন হিদায়াতকারী নেই।
এই আয়াত থেকে জানতে পারি যে আল্লাহ্ কুরআনের মধ্যে উত্তম হাদিস নাযিল করেছেন। নীচে কিছু উত্তম হাদিসের আয়াত দেওয়া হল।
৭৯-সুরা আন-নাযিআত / আয়াত ১৫
هَلۡ اَتٰىکَ حَدِیۡثُ مُوۡسٰی
হাল আতা-কা হাদীছুমূছা-।
মূসার হাদিস তোমার কাছে পৌঁছেছে কি? (এর পর কুরআনেই মুসার হাদিস বর্ণনা করা হয়েছে।)
৫১-সূরা আয-যারিয়াত / আয়াত-২৪
هَلۡ اَتٰىکَ حَدِیۡثُ ضَیۡفِ اِبۡرٰهِیۡمَ الۡمُکۡرَمِیۡنَ
হাল আতা-কা হাদীছুদাইফি ইবরা-হীমাল মুকরামীন।
তোমার কাছে কি ইবরাহীমের সম্মানিত মেহমানদের হাদিস এসেছে? (এর পর কুরআনেই ইবরাহীমের সম্মানিত মেহমানদের হাদিস বর্ণনা করা হয়েছে।)
৮৮-সুরা আল-গাশিয়া / আয়াত-১
هَلۡ اَتٰىکَ حَدِیۡثُ الۡغَاشِیَۃِ
হাল আতা-কা হাদীছুল গা-শিয়াহ।
আচ্ছন্নকারী কিয়ামাতের হাদিস তোমার কাছে পৌঁছেছে কি? (এর পর কুরআনেই আচ্ছন্নকারী কিয়ামাতের হাদিস বর্ণনা করা হয়েছে।)
কুরআনের মধ্যে আল্লাহ্ এই সমস্ত হাদিস বর্ণনা করার পর, এই হাদিস সম্পর্কে কি বলছে দেখুন।
৫৩-সুরা আন-নাজম / আয়াত-৫৯
اَفَمِنۡ هٰذَا الۡحَدِیۡثِ تَعۡجَبُوۡنَ
আফামিন হা-যাল হাদীছিতা‘জাবূন।
তোমরা কি এ হাদিসে বিস্মিত হচ্ছ?
৫৬-সুরা আল-ওয়াকিয়া / আয়াত-৮১
اَفَبِهٰذَا الۡحَدِیۡثِ اَنۡتُمۡ مُّدۡهِنُوۡنَ
আফা বিহা-যাল হাদীছিআনতুম মুদহিনূন।
তবুও কি তোমরা এ হাদিসকে তুচ্ছ মনে করছ?
৫২-সুরা আত-তূর / আয়াত-৩৪
فَلۡیَاۡتُوۡا بِحَدِیۡثٍ مِّثۡلِهٖۤ اِنۡ کَانُوۡا صٰدِقِیۡنَ
ফালইয়া’তূবিহাদীছিম মিছলিহীইন কা-নূসা-দিকীন।
অতএব, তারা যদি সত্যবাদী হয় তবে তার অনুরূপ হাদিস নিয়ে আসুক।
৬৮-সুরা আল-কলম / আয়াত ৪৪
فَذَرۡنِیۡ وَ مَنۡ یُّکَذِّبُ بِهٰذَا الۡحَدِیۡثِ ؕ سَنَسۡتَدۡرِجُهُمۡ مِّنۡ حَیۡثُ لَا یَعۡلَمُوۡنَ
ফাযারনী ওয়া মাইঁ ইউকাযযি বুবিহা-যাল হাদীছি ছানাছতাদরিজুহুম মিন হাইছুলাইয়া‘লামূন।
অতএব ছেড়ে দাও আমাকে এবং যারা এ হাদিস প্রত্যাখ্যান করে তাদেরকে। আমি তাদেরকে ধীরে ধীরে এমনভাবে পাকড়াও করব যে, তারা জানতে পারবে না।
৪৫-সুরা আল-জাসিয়া / আয়াত-৬
تِلۡکَ اٰیٰتُ اللّٰهِ نَتۡلُوۡهَا عَلَیۡکَ بِالۡحَقِّ ۚ فَبِاَیِّ حَدِیۡثٍۭ بَعۡدَ اللّٰهِ وَ اٰیٰتِهٖ یُؤۡمِنُوۡنَ
তিলকা আ-য়া-তুল্লা-হি নাতলূহা-‘আলাইকা বিলহাক্কিফাবিআইয়ি হাদীছিম বা‘দাল্লা-হি ওয়া আ-য়া-তিহী ইউ’মিনূন।
এগুলো আল্লাহর আয়াত, আমি তা যথাযথভাবেই তোমার কাছে তিলাওয়াত করছি। অতএব তারা আল্লাহ ও তাঁর আয়াতের পর আর কোন্ হাদিসে বিশ্বাস করবে?
এখানে একটি প্রশ্ন উঠতে পারে যে- উপরে বলা হয়েছে হাদিস দুই প্রকার। এক প্রকার হাদিস আল্লাহ্ ও রসূলের আর এক প্রকার হাদিস মানুষে লিখা।
কিন্ত কুরআন থেকে যে হাদিস গুলো পড়লাম এই হাদিস গুলো তো আল্লাহর। তাহলে রসূলের হাদিস কথায়? এর উত্তরে নীচের আয়াতটি পড়ুন।
৬৯-সুরা আল-হাক্কাহ / আয়াত-৪০
اِنَّهٗ لَقَوۡلُ رَسُوۡلٍ کَرِیۡمٍ
ইন্নাহূলাকাওলুরাছূলিন কারীম।
নিশ্চয়ই এটি এক সম্মানিত রাসূলের (মোহাম্মাদ সাঃ) বাণী।
কুরআনের মধ্যে যে হাদিস গুলো ব্যাবহার হয়েছে, ওই হাদিস গুলো সহ সম্পূর্ণ কুরআন আল্লাহ্, রসূলের কথার মাধ্যমে আমাদের কাছে পোঁছে দিয়েছেন।
তাই কুরআনে যে হাদিস গুলো ব্যাবহার হয়েছে, ওই হাদিস গুলো সহ সম্পূর্ণ কুরআন হচ্ছে রসূলের কথা।
আর মানুষের লিখা হাদিস গ্রন্থ গুলো সাধারণ মানুষের কথা। আল্লাহ্ ও রসূলের নামে বাজারে বিক্র করা হচ্ছে, কিছু টাকা উপার্জন করার জন্য।
এই আর্টিকেল গুলো পড়ুন।
0 $type={blogger}