সংক্ষেপে ইসলাম ধর্মের পরিচয়।

ইসলাম ধর্মের পরিচয়।

‘ইসলাম' একটি আরবি শব্দ। যার মুলে আছে ‘সালম’ এবং ‘সিলম। ‘সালম'-এর অর্থ শান্তি এবং ‘সিল্ম’-এর অর্থ ‘আল্লাহর কাছে আত্মসমর্পণ”। তাই সংক্ষেপে ‘ইসলাম’-এর অর্থ হল ‘আল্লাহর কাছে আত্মসমর্পণের মধ্য দিয়ে শান্তি অর্জন।

আল-কোরআন এবং হাদিসের বহু জায়গায় ‘ইসলাম’ শব্দটি উল্লিখিত হয়েছে। ‘সুরা আল-ই-ইমরানে’ আছে—নিশ্চয়, ইসলাম আল্লাহর একমাত্র ধর্ম।” (৩ নং সুরা, আয়াত ১৯) ওই একই সূরার ৮৫ নং আয়াতে আল্লাহর মনোনীত ধর্ম হিসেবে ইসলামের কথাই তুলে ধরা হয়েছে।

সংক্ষেপে ইসলাম ধর্মের পরিচয়।

একজন মুসলিম বেক্তির পরিচয়।

একজন মুসলিম সেই ব্যক্তি যিনি পরিপূর্ণভাবে সর্বশক্তিমান আল্লাহর কাছে আত্মসমর্পণ করেন। মুসলিম' শব্দটি কোরআন ও হাদিসের বিভিন্ন জায়গায় উল্লিখিত হয়েছে। ভূমিকাতে ‘সূরা আল-ই-ইমরানে’র ৬৪ নং আয়াতটি উদ্ধৃত করা হয়েছে। তাতেও ‘মুসলিম’ শব্দটি আছে যার অর্থ আত্মসমর্পণকারী।

‘সূরা হা-মীম সাজদাহ’-এ আছে— “অমান্ আহসানু কওলাম্ মিম্মান দাআ-ইলাল্ল—হি অ আ মিলা স্ব—লিহাওঁ অ কব ইন্নানী মিনাল মুসলিমীন্।” (৪১ নং সূরা , আয়ত ৩৩)

অর্থাৎ, “তার কথা অপেক্ষা উৎকৃষ্ট কথা আর কার, যে আল্লাহর পথে আহ্বান করে এবং সৎকার্য করে আর বলে, নিশ্চয়ই আমি মুসলিমদের অন্তর্গত।”

ইসলাম ধর্ম সম্পর্কে ভুল ধারণা।

অনেক মানুষের মধ্যে এই ভুল ধারণা আছে যে ইসলাম একটি নতুন ধর্ম যার প্রতিষ্ঠা হয়েছিল চোদ্দোশো বছর আগে এবং হজরত মহম্মদ (সাঃ) এটি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। আপনাদের জ্ঞাতার্থে জানিয়ে রাখি ইসলাম কোনও নতুন ধর্ম নয়, আর চোদ্দোশো বছর আগেও ইসলামের জন্ম হয়নি। এই সবুজ শ্যামল পৃথিবীতে মানুষের আবির্ভাবের শুভলগ্নেই ইসলামের জন্ম। ইসলাম মানুষের আদি ধর্ম এবং হজরত আদম (আঃ)-এর হাতে এর সূত্রপাত। তাই হজরত মহম্মদ (সাঃ) ইসলামের প্রতিষ্ঠাতা নন, তিনি শেষ নবি।

তার আগে প্রায় এক লক্ষ চব্বিশ হাজার নবি এসেছিলেন এবং তাঁরা প্রত্যেকেই ইসলামধর্ম প্রচার করেছিলেন। কোরআন মাজিদে অবশ্য অল্প কয়েকজন নবির নাম আছে। তাদের মধ্যে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য হলেন হজরত নূহ (আঃ), হজরত সোলেমান (আঃ), হজরত দাউদ (আঃ), হজরত ইব্রাহিম (আঃ), হজরত মুসা (আঃ), হজরত ঈশা (আঃ) প্রমুখ। ভিন্ন ভিন্ন সময়ে, ভিন্ন ভিন্ন স্থানে তাঁদের আবির্ভাব ঘটেছিল। কিন্তু তারা ছিলেন একই বিশ্বাসের বার্তাবাহক—তৌহিদের আলোর দূত। ইহকাল ও পরকালে মানুষ কীভাবে সফলকাম হবে—সে কথাই তারা প্রচার করেছেন বারে বারে।

মহম্মদ (সাঃ) ছিলেন আল্লাহর শেষ বাণীবাহক। তিনিও পূর্ববর্তী নবিদের মতো এক আল্লাহর মহিমা প্রচার করেছেন, মানুষকে সৎ ও সত্যের দিকে আহ্বান করেছেন। পূর্ববর্তী নবিরা যে প্রত্যাদেশ পেয়েছিলেন সেগুলি কালক্রমে প্রক্ষিপ্ত রচনায় সমৃদ্ধ হয়ে মৌলিকত্ব হারিয়ে ফেলে। তাছাড়া সেগুলি নির্দিষ্ট জনগোষ্ঠী ও নির্দিষ্ট কালের জন্য সীমাবদ্ধ ছিল। কিন্তু মহম্মদ (সাঃ) নির্দিষ্ট কাল বা নির্দিষ্ট স্থানের জন্য আসেননি—তিনি এসেছিলেন সর্বকালের জন্য–সমগ্র বিশ্বের জন্য—তাই তো তিনি বিশ্বনবি।

তিনি পূর্ববর্তী নবিদের অপূর্ণতাকে পূর্ণতা দান করেছিলেন। তাদের প্রচারিত মতাদর্শে যে প্রক্ষিপ্ত অংশ অনুপ্রবেশ করেছিল তিনি সেগুলি দূর করে ইসলামধর্মকে সম্পূর্ণ ও সুগঠিত করেছিলেন। যিনি সমগ্র বিশ্বকে সৃষ্টি করেছেন, সেই মহান স্রষ্টা আল্লাহ তাকে কোরআনের আলোকিত বাণীর মাধ্যমে জানিয়ে দিয়েছেন—কোনটা ঠিক আর কোনটা ভুল, কোনটা আলোর পথ আর কোনটা অন্ধকারের পথ। তিনি আল্লাহর ইচ্ছা, ইশারা ও আদেশে সমগ্র মানবজাতিকে সর্বোত্তম সফলতার পথ বলে দিয়েছেন। যেহেতু মহম্মদ (সাঃ)-এর কাছে আল্লাহ তার মনোনীত ধর্মকে সম্পূর্ণ করে পাঠিয়েছেন, তাই তার পরে আর কোনও নবি আসেননি এবং আর কোনও নবি আসবেন না।

তিনি-ই সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ নবি। যে আলোকিত গ্রন্থ কোরআন তাকে দান করা হয়েছিল তা সর্বকালের জন্য সর্বোত্তম পথনির্দেশক আলোক-উৎস। ইব্রাহিম (আঃ), মুসা (আঃ), ঈসা (আঃ) প্রমুখ নবির দ্বারা প্রচারিত তৌহিদের বাণী বিশ্বজনীন হয়ে ওঠে মহম্মদ (সাঃ)-এর আগমনে। অর্থাৎ, ঈশা (যিশু)-সহ পূর্ববর্তী সমস্ত নবিই ছিলেন ইসলামধর্মের বাণীবাহক—তারা এক আল্লাহর কথাই প্রচার করেছিলেন।

তাঁরা সবাই ছিলেন মুসলিম-আল্লাহর কাছে আত্মসমর্পণকারী। আল্লাহ পবিত্র কোরআনে ঘোষণা করেছেন। তারপর ঈশা যখন তাদের অবাধ্যতা অনুভব করলেন, তখন তিনি বললেন, কে আছো আল্লাহর পথে আমার সাহায্যকারী ? সঙ্গীগণ বললেন, আমরাই তো আল্লাহর পথে সাহায্যকারী; আমরা আল্লাহর প্রতি ঈমান এনেছি, আর আপনি সাক্ষী থাকুন, আমরা মুসলমান হয়েছি।” (সূরা আল-ই ইমরান : ৩ নং সুরা, আয়াত ৫২) ওই একই সুরার ৬৭নং আয়াতে আছে।

ইব্রাহিম খ্রিস্টান ছিলেন না; বরং তিনি ছিলেন একনিষ্ঠ মুসলিম; আর তিনি অংশীবাদীদের দলভুক্ত ছিলেন না।

ইসলাম ও হিন্দু ধর্মের সাদৃশ্য - সূচিপত্র।