কিভাবে ঈশ্বরের প্রার্থনা করতে হয়। ইসলাম ও হিন্দু ধর্মে।

ইসলামের পাঁচ স্তম্ভ : ইসলামি ধর্মতত্ত্ব।

বুখারি শরিফে আছে : ইবনে ওমর (রাঃ) বর্ণনা করেছেন, রসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন : ইসলাম দাঁড়িয়ে আছে পাঁচটি (মূল নীতির) উপর ; যেমন—

ইসলাম ও হিন্দু ধর্মে সায়ংকালীন ঈশ্বর উপাসনা।

(১) কলেমা—শপথ বাক্য! আমি শপথ করে বলছি : লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ। আর্থ, আল্লাহ ছাড়া কোনও উপাস্য নেই আর মহম্মদ (সাঃ) আল্লাহর রাসূল বা দূত। (২) সালাত-নামাজ বা প্রার্থনা। (৩)রমযান মাসে সিয়াম বা রোযা পালন করা। (৪) যাকাত প্রদান। (৫) হজ্ব পালন।

(১) ঈমান বা বিশ্বাস।

শপথ বাক্য বা কলেমার লক্ষ্য ঈমান বা বিশ্বাস। আল্লাহ ছাড়া কোনও উপাস্য নেই আর মহম্মদ (সাঃ) আল্লাহর রসূল বা দূত।

(২) সালাত বা নামায।

সালাত বা নামায কথাটির ইংরেজি প্রতিশব্দ হল ‘প্রেয়ার’, যার অর্থ প্রার্থনা করা। নামাযের মধ্য দিয়ে মুসলমান প্রতিদিন পাঁচবার আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করে। কিন্তু নামায প্রার্থনার চেয়েও বড়। 

নামাযে প্রার্থনা করার সঙ্গে সঙ্গে নিখিল জগতের প্রতিপালক সর্বশক্তিমান আল্লাহর গুণকীর্তন করা হয়, প্রশংসা করা হয়। আমার মনে হয় এটা ধর্মপরায়ণতার প্রতি অভিমুখীকরণ একটি আলোকিত প্রয়াস।

নামাযে প্রথমে ‘সূরা ফাতিহা পড়া হয়। তারপর কোরআন শরিফ থেকে যে কোনও একটি সূরা পড়তে হয়। ধরুন, ‘সূরা ফাতিহার পর ইমাম (নামায পরিচালক) আবৃত্তি করলেন সূরা মায়েদাহ :

“হে বিশ্বাসীগণ! মদ, জুয়া, মূর্তিপূজার বেদি ও ভাগ্য নির্ণায়ক শব ঘৃণ্য বস্তু, শয়তানের কাজ, সুতরাং তোমরা তা বর্জন করো যাতে তোমরা সফলকাম হতে পারো। 

শয়তান তো মদ ও জুয়া দ্বারা তোমাদের মধ্যে শত্রুতা ও বিদ্বেষ ঘটাতে চায় এবং তোমাদের আল্লাহর স্মরণে ও নামাযে বাধা দিতে চায়। অতএব তোমরা কি নিবৃত্ত হবে না?” (৫ নং সূরা আয়াত ৯০-৯১)

এইভাবে আল্লাহ কোরআনের মধ্যে মানুষের পথনির্দেশ করেন যা ইমামের দ্বারা উচ্চারিত হয় নামাযের মধ্যে। মদ, জুয়া, মূর্তিপূজা, ভাগ্যলিপি গণনা সবই শয়তানের কাজ। 

এ সব থেকে দুরে থাকা উচিত। তবেই মানুষ সফলকাম হতে পারবে। তাই ইংরেজি ‘প্রেয়ার’ শব্দটি পরিপূর্ণভাবে ‘সালাত’ বা ‘নামায’ শব্দের প্রতিশব্দ হয়ে উঠতে পারে না।

নামায মানুষকে নির্লজ্জ ও অসৎ কাজ থেকে দূরে সরিয়ে রাখে।

‘সূরা আন কাবৃত’-এ আছে - “তুমি কি তোমার প্রতি প্রত্যাদিষ্ট গ্রন্থ আবৃতি করো এবং নামায যথাযথভাবে পড়ো। (কারণ) নামায অশ্লীল ও মন্দকাজ থেকে বিরত রাখে। আল্লাহর স্মরণই সর্বশ্রেষ্ঠ। তোমরা যা করো আল্লাহ জানেন। (২৯ নং সূরা : আয়াত ৪৫)

আত্মাকে শক্তিশালী করার জন্য পাঁচবার নামায প্রয়োজন।

শরীরকে শক্তিশালী করার জন্য তিনবার খাদ্য গ্রহণ করার প্রয়োজন আর আত্মাকে শক্তিশালী করার জন্য প্রাত্যহিক পাঁচবার নামায প্রয়োজন। নামাযে শুধু আত্মা শক্তিশালী হয় না, শরীরও সুগঠিত হয়। শরীরের গ্লানি দূর হয়।

সিজদাহ নামাযের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ।

সিজদাহ বা ভূমিতে কপাল ঠেকিয়ে মহান আল্লাহর উদ্দেশে প্রণিপাত নামাযের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ।

i) হে মরিয়ম! তোমার প্রতিপালকের অনুগত হও ও সিজদা (মাথা নত) করো এবং যারা রুকু করে তাদের সাথে রুকু করো।' (সূরা আল-ই-ইমরান : ৩ নং সূরা : আয়াত ৪৩)

ii) “হে বিশ্বাসীগণ! তোমরা রুকু করো, সিজদা করো এবং তাোমাদের প্রতিপালকের উপাসনা করো ও সৎ কাজ করো যাতে তোমরা সফলকাম হতে পারো।” (সূরা হজ্ব : ২২ নং সুরা : আয়াত ৭৭)

হিন্দুধর্মে ঈশ্বরের প্রার্থনা।

হিন্দুধর্মের অন্যতম প্রার্থনা সাষ্টাঙ্গ।

হিন্দুধর্মে প্রার্থনার অনেক রীতি আছে। সেগুলির মধ্যে অন্যতম হল ‘সাষ্টাঙ্গ'। ‘স-অষ্ট-অঙ্গ’ থেকে এসেছে 'সাষ্টাঙ্গ’। শরীরের আটটি অংশ দিয়ে ভূমি স্পর্শ করে এই প্রার্থনা করতে হয়। 

মুসলমানরা নামাযের মধ্যে সিজদা করার সময় যেমন করে, 'সাষ্টাঙ্গ প্রণাম’ অনেকটা সেই রকম। এই সময় কপাল, নাক, দুটি হাতের তালু, দুটি হাঁটু এবং দুটি পায়ের দুটি বৃদ্ধাঙ্গুলি ভূমি স্পর্শ করে।

হিন্দুধর্মে মূর্তিপূজা নিষিদ্ধ।

অধিকাংশ হিন্দুই মূর্তিপূজায় মেতে থাকেন—মূর্তিপূজাটাকে ধর্ম বলে মনে করেন—অথচ হিন্দুধর্মগ্রন্থে দ্ব্যর্থহীন ভাষায় সে কথা উল্লেখ করা হয়েছে।

i) ভাগবদ্গীতায় আছে :“যাদের বস্তুগত আকাক্ষা দ্বারা বুদ্ধিনাশ হয় তারাই প্রতিমা পূজা করে।”(৭ম অধ্যায় : শ্লোক ২০)।

ii) শ্বেতাশ্বতর উপনিষদে আছে : ‘ন তস্য প্রতিমা অস্তি’ ‘অদ্বিতীয় পরমেশ্বরের কোনও প্রতিমা বা প্রতিকৃতি নেই। (৪র্থ অধ্যায় : শ্লোক ১৯)

iii) যজুর্বেদেও আছে : ‘ন তস্য প্রতিমা অস্তি’। (৩২ নং অধ্যায় : শ্লোক ২)

iv) যজুর্বেদের অন্য শ্লোকে আছে : “অন্ধং তম : প্রৰিণন্তি যেহসংভূতিমুপাসতে। ততো ভূয় ই তে তমো য উ সভৃত্যাং রতাঃ।”

যারা অবিদ্যা কাম্য কর্মের বীজস্বরূপ প্রকৃতির (অর্থাৎ জল, বায়ু, অগ্নি ইত্যাদির) উপাসনা করে তারা অন্ধকার সংসারে প্রবেশ করে, আর যারা ‘সত্যাং ’ অর্থাৎ সৃষ্ট পদার্থের (যেমন মূর্তি, গৃহ, গাড়ি ইত্যাদির) পূজা করে তারা তা থেকেও অধিক অন্ধকারে প্রবেশ করে। (যজুর্বেদ সংহিতা : ৪০ শ অধ্যায় : শ্লোক ৯)

অনুবাদকের সংযোজন :

উপনিষদে আছে : ‘দিবব্যা হ্যমূর্তঃ পুরুষঃ সবাহ্যাভ্যন্তরে হ্যজঃ। সরলার্থ : ‘সেই জ্যোতিঃ স্বরূপ পুরুষের কোনও মূর্তি বা আকার নেই। তিনি বাহিরে ও ভিতরে সর্বত্র বিদ্যমান, তিনি জন্মরহিত। (মুণ্ডক উপনিষৎ, দ্বিতীয় মুণ্ডক, প্রথম খণ্ড, শ্লোক ২ : অনুবাদ : অতুলচন্দ্র সেন, পৃঃ ২৬৩)।

যাঁর আকার নেই, তিনি বাইরে ও ভেতরে সর্বত্র বিরাজমান তার মুর্তি গঠিত হতে পারে না। মুর্তি গঠন করার অর্থ তাকে ক্ষুদ্র করা, কারণ ওই মূর্তির বাইরে পড়ে রয়েছে বিশাল বিশ্ব নিখিল।

শ্রীমদভাগবতে আছে - অহং সর্বেষু ভূতেষু ভূতাত্মবস্থিতঃ সদা। তমবজ্ঞায় মাং মত্যেঃ কুরুতে হর্চা বিড়িম। ১১ যোমাং সর্বেষু ভূতেষু সন্ত মাত্মাননীশ্বরম। হিত্বাৰ্চাং ভজতে মৌঢ়ে ভূখন্যেৰ ভূজুহেতিলঃ ।১৯

সরলার্থ : “ভগবানই সর্বভূতে বর্তমান এবং সকল প্রাণীর আত্মা তথা অধীশ্বর। তাকে মূঢ়তাবশত পরিত্যাগ করে প্রতিমাপূজা ভস্মে ঘৃতাহুতি নিক্ষেপের মতো বিয়া প্রচেষ্টা। এ ধরনের লোক ঈশ্বরবিদ্বেষী এবং বৃথাভিমানী ভিন্নদর্শী এবং সর্বভূতের জাতবৈরী জীব। সে শান্তি পায় না।”

(শ্রীমদ্ভাগবত, ৩য় স্কন্ধ, ২৯ অধ্যায়; সম্পাদনা : রণব্রতসেন, পৃ. ১৫৪)।

এই শ্লোক থেকে স্পষ্ট বোঝা যায়, যিনি সর্বভূতে বিরাজমান তাকে মূর্তি দ্বারা আবদ্ধ করে সংকীর্ণ অর্থে প্রকাশ করা যায় না। 

সব কিছুর মধ্যেই যখন তিনি, তখন মাটির একটা কাঠামোর মধ্যে তাকে বন্দি করা হয় কেন ? তাহলে যে সর্বভূতে তার অবস্থানটাই মিথ্যা হয়ে যায়। 

এই শ্লোকে আরও একটি কথা দ্ব্যর্থহীন ভাষায় ঘোষণা করা হয়েছে যে মূর্তিপূজা ভস্মে ঘৃতাহুতি নিক্ষেপের মতো বিফল প্রচেষ্টা।

যে মূর্তিপূজা করল সে ঈশ্বরবিরোধী কাজ করল এবং সে সর্বভূতের জাতবৈরী অর্থাৎ শত্রুতে পরিণত হল। ইসলামধর্মেও মূর্তিপূজা কঠোরভাবে নিষিদ্ধ। 

এখানে হিন্দু ও ইসলামধর্মের মধ্যে অন্তর্নিহিত সাদৃশ্যটা বেশ স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। বোঝা গেল, অন্তঃসলিলা ফন্তু ধারার মতোই বিশ্বাসের একই স্রোতধারা বয়ে গেছে উভয় ধর্মের অন্তরে অন্তরে।

(৩) যাকাত।

ক. যাকাত শব্দের অর্থ শুদ্ধিকরণ। যাকাত ইসলামের তৃতীয় স্তম্ভ যার অর্থ শুদ্ধিকরণ এবং বৃদ্ধি।

খ. শতকরা ২.৫০ টাকা গরিবকে দান করতে হয়। যিনি ‘সাহেবে নেসাব’ অর্থাৎ শাস্ত্রসম্মত ধনি (যাঁর কাছে সাড়ে ৭ ভরি সোনার মূল্যের অর্থ সঞ্চিত আছে) তাঁকে বছরে একবার যাকাত বা Poor Tax দিতে হবে। যাকাতের পরিমাণ শতকরা ২.৫০ টাকা। 

ইসলামধর্মে যাকাত বা গরিবকে তাদের প্রাপ্য অর্থ প্রদান নামায পড়ার মতোই গুরুত্বপূর্ণ। কোরআন মাজিদে আছে “নামায যথাযথভাবে আদায় করো, যাকাত দান করো, আর আল্লাহকে উত্তম ঋণ দান করে।” (৭৩:২০)।

গ. যদি সমস্ত ধনি ব্যক্তি যাকাত দিতেন তাহলে কোনও গরিব না খেয়ে মরত না। যদি সমস্ত ধনি ব্যক্তি যাকাত দিতেন তাহলে পৃথিবী থেকে দারিদ্র মুছে যেত। একজন মানুষকেও আর না খেয়ে মরতে হত না।

ঘ. যাকাত নিশ্চিত করে, সম্পদ কেবলমাত্র ধনীদের মধ্যে কুক্ষিগত হতে পারে না। “সুরা হাশ্র’-এ আছে “যাতে তোমাদের মধ্যে যারা বিত্তবান কেবল তাদের মধ্যেই ঐশ্বর্য আবর্তন না করে।”(৫৯ নং সুরা , আয়াত ৭)

হিন্দুধর্মে দানশীলতা।

ইসলামে যেমন দরিদ্রকে দান করা ধর্মের অঙ্গ, হিন্দুধর্মেও তেমনি দরিদ্রকে দান করা অতি পুণ্যের কাজ।

১. ঋগ্বেদ-এ আছে - ‘উতো রয়ি : পৃণতো লোপ দস্যতা পূণন্মর্ডিোরং ন বিন্দুতে। (১০ মণ্ডল, ১১৭ সূক্ত, শ্লোক ১) সরলার্থ – “দাতার ধন হ্রাস হয় না। অদাতাকে কেউই সুখী করে না।” (ঋগ্বেদ সংহিতা ৪ অনুবাদ ; রমেশচন্দ্র দত্ত, পৃঃ ৬১২)

অর্থাৎ দান করলে কমে না, বরং দাতা সুখী হয়। দান করলে যে কমে না সে কথা যাকাতের মধ্যেও আছে। যাঁর আধ্যাত্মিক বোধ আছে তিনি জানেন, দানে সম্পদ বৃদ্ধি পায়।

পৃণীয় দিন্নধমানায় ব্যান্দ্রাঘীয়াংসমনু পশ্যেত পন্থা। আ হি বৰ্তন্তে রথ্যেব চক্ৰান্যমন্যমুপ তিন্ত রায়ঃ।(ঋগ্বেদ : ১০ মণ্ডল, ১১৭ সূক্ত, শ্লোক ৫)

সরলার্থ - “যাচককে অবশ্য ধন দান করবে। সে দাতা ব্যক্তি অতি দীর্ঘ পথপ্রাপ্ত হয়। রথে চক্র যেমন উর্ধাধোভাবে ঘূর্ণিত হয় সে রূপ ধন কখনও এক ব্যক্তির কাছে, কখনও অপর ব্যক্তির কাছে গমন করে অর্থাৎ এক স্থানে চিরকাল থাকে না।” (ওই, পৃঃ ৬১২)

“যে কেবল নিজে ভোজন করে, তার কেবল পাপই ভোজন করা হয়।” (ঋগ্বেদ-সংহিতা ; অনুবাদ : রমেশচন্দ্র দত্ত ১০ মণ্ডল, ১১৭ সূক্ত, শ্লোক ৬ ; পৃঃ ৬১২)।

অর্থাৎ, ভোজন করার সময় অভুক্ত অনাহারী মানুষকে দিয়ে খেতে হবে। অপরকে না দিয়ে শুধুমাত্র নিজের উদর পূর্তি করা পাপ। ইসলামধর্মেও অনাহারী ব্যক্তিকে আহার দান করার কথা এসেছে বারে বারে। 

নিজে খাওয়ার আগে প্রতিবেশীদের খোঁজ-খবর নেওয়ার কথাও বলা হয়েছে সেখানে। দানশীলতার কথা ভাগবত গীতার ১৭ অধ্যায়ের ২০ নং শ্লোক এবং ১৬ অধ্যায়ের ৩ নং শ্লোকে উল্লিখিত হয়েছে।

(৪) সিয়াম : রোযা : উপবাস।

ক. সিয়াম বা রোযা ইসলামের চতুর্থ স্তম্ভ। সুর্যোদয়ের পূর্ববর্তী ফুটি-ফুটি আলোর সোবেহা সাদেক থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত সারাটা দিন পানাহার, দাম্পত্য সম্ভোগ প্রভৃতি নানাবিধ ভোগাচার থেকে নিজেকে বিরত রাখার নাম রোযা। গোটা রমযান মাসব্যাপী এই উপবাসব্রত পালন করা প্রতিটি মুসলমানের অবশ্য পালনীয় কর্তব্য।

খ. রোযা মানে আত্মসংযম পবিত্র কোরআন শরিফে আছে – “হে বিশ্বাসীগণ! তোমাদের জন্য সিয়ামের (রোযার) বিধান দেওয়া হল, যেমন বিধান তোমাদের পূর্ববর্তীগণকে দেওয়া হয়েছিল, যাতে তোমরা আত্মরক্ষা করতে পারো।” 

(সূরা বাকারাহ : ২ নং সূরা ৪, আয়াত ১৮৩) আজকে মনস্তত্ত্ববিা আমাদের জানাচ্ছেন, যদি কোনও ব্যক্তি ক্ষুধাকে দমন করতে পারেন তাহলে তিনি তার অধিকাংশ আকাঙ্ক্ষাকে দমন করতে পারবেন।

গ. রোযা নিষিদ্ধ করেছে মদ, ধূমপান এবং অন্যান্য নেশাকে একমাসব্যাপী রোযার মধ্য দিয়ে যে কোনও মানুষ তার খারাপ অভ্যাসগুলি ত্যাগ করার সুবর্ণ সুযোগ লাভ করে। 

যদি কোনও মানুষ রোযার কারণে পুরো একমাসব্যাপী মদ এবং ধূমপান থেকে দূরে থাকে, তাহলে সে জীবনের বাকিটা অংশও ওইসব খারাপ নেশা থেকে দূরে থাকতে পারবে, ইনশা-আল্লাহ।

ঘ. চিকিৎসা সুবিধা। রোযার মধ্য দিয়ে মানুষ বিবিধ চিকিৎসা সুবিধা লাভ করে। রোযার মধ্য দিয়ে অন্ত্রের পরিশোধন ঘটে, কোলেস্টরেলের মাত্রা কমে যায়।

হিন্দুধর্মের উপবাস।

হিন্দুধর্মেও উপবাসের কথা আছে। মনুস্মৃতি' গ্রন্থের ৬নং অধ্যায়ের ২৪নং শ্লোকে একমাসব্যাপী উপবাসব্রত পালনের বিষয় উল্লিখিত হয়েছে। আরও বেশ কিছু শ্লোকে পরিশােধনের উপায় হিসেবে উপবাসের কথা বর্ণিত হয়েছে, মনুস্মৃতি ৪ নং অধ্যায়, শ্লোক ২২২ ও মনুস্মৃতি ১১ নং অধ্যায়, শ্লোক ২০৪

(৫) হজ্ব : তীর্থযাত্রা।

ক. হজ্ব ইসলামের পঞ্চম স্তম্ভ। প্রয়োজনীয় সংসার খরচ বাদ দিয়ে দুনিয়ার যে কোনও প্রান্তের যে কোনও মুসলমানের কাছে মক্কার কাবাঘরে যাওয়া ও আসার মত বৈধ অর্থ যদি থাকে তার ওপরে হজ্ব ফরয। সচ্ছল মুসলমানের জীবনে একবার হজ্ব করা অবশ্য কর্তব্য। এ আল্লাহর আদেশ।

খ. বিশ্বভ্রাতৃত্ব হজের মধ্য দিয়ে বিশ্বভ্রাতৃত্বের বাস্তব উদাহরণ রচিত হয়। হজ্ব বিশ্বের বৃহত্তম ধর্মীয় সমাবেশ। যেখানে ২৫ লক্ষেরও বেশি মানুষ প্রতি বছর সমবেত হন। আমেরিকা, রাশিয়া, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, ভারত প্রভৃতি দেশ থেকে ভক্তরা আসেন হজ্ব মহা অভিসারে।

ধান, দরিদ্র, রাজা, প্রজাসহ প্রত্যেক তীর্থযাত্রী কেবলমাত্র সেলাইবিহীন দু-খণ্ড কাপড় (এহরাম) পরিধান করে মক্কার কাবাশরিফে আসেন হজ্বব্রত পালন করতে। এখানে বর্ণের কোনও বিভাজন থাকে না, ভাষার কোনও বিভাজন থাকে না, দেশের কোনও বিভাজন থাকে না। সবাই এক মন এক ধ্যান নিয়ে প্রিয় মিলনের আকাঙ্ক্ষায় কাবায় হাজির হন।

হিন্দুধর্মের তীর্থযাত্রা।

হিন্দুধর্মে বিভিন্ন তীর্থস্থানের কথা উল্লিখিত হয়েছে।

i) ঋগ্বেদ-এ আছে ; ইলায়াস্তা পদে বয়ং নাভা পৃথিব্যা আঁধি (৩ মণ্ডল, ২৯ সূক্ত, শ্লোক ৪)“ইলা’ শব্দের অর্থ আল্লাহ। রাস্তার অর্থ স্থান। এতএব ইলায়া’ পাশের অর্থ আল্লাহ স্থান। নাভা’র অর্থ নাভি ৰা পৃথিবীর কেন্দ্রভূমি। অর্থাৎ, পৃথিবীর কেন্দ্রভূমিতে আল্লাহর স্থান বা তীর্থক্ষেত্র অবস্থিত।

মোনিয়ার উইলিয়ামস প্রণীত সংস্কৃত-ইংরেজি অভিধানে (২০০৬ সাঋেরপ) আছে ‘ইলয়াস্তা’ একটা তীর্থক্ষেত্রের নাম। কিন্তু এটা পৃথিবীতে কোথায় অবস্থিত তা কেউ জানে না।

ii) কোরআন শরিফে আছে - “নিশ্চয় মানবজাতির জন্য সর্বপ্রথম যে গৃহ প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল তা তো ৰক্কায়, তা শিসাপ্ত ও বিশ্বজগতের দিশারী।” (সূরা আল-ই-ইমরান : ৩ নং সূরা, আয়াত ৪৬) ‘বাক্কা’ মক্কারই অন্য নাম। 

মক্কা-ই পৃথিবীর নাভিপ্রদেশ ৰা কেন্দ্রে অবস্থিত। অথর্ববেদে ‘কুন্তাপ’ সূক্তে উল্লেখ আছে। সেখানে কুন্তাপ’ বলতে পৃথিবীর নাভি প্রদেশ বা মক্কা (বাক্কা) নগরীকে বোঝানো হয়েছে।

iii) ঋগ্বেদের ৩য় মণ্ডলের, ১৯ সূক্তের শ্লোক নরাশংস’ শব্দটির উল্লেখ আছে। পণ্ডিতরা মনে করেন এটি মহম্মদ (সাঃ)-এর প্রশংসাসূচক নাম। তাই বলা যায় ‘ইলয়াস্তা নিঃসন্দেহে মক্কা’।

iv) ঋগ্বেদের ১ মণ্ডলের ১২৮ সূক্তের ১নং শ্লোকে যে ইলম্পদ শব্দের উল্লেখ আছে তা আল্লাহর পবিত্র স্থান বা মক্কাকেই ইঙ্গিত করে।

 ইসলাম ও হিন্দু ধর্মের সাদৃশ্য - সূচিপত্র।