ইসলামধর্মের ঈশ্বর ও আল্লাহ্‌ সম্পর্কে ধারণা।

কোরআন আল্লাহর বাণী। কোরআন ঘোষণা করেছে—আল্লাহ এক ও অদ্বিতীয়। আল্লাহ সম্পর্কিত এই ধারণামূল হিন্দুধর্মেও আছে। আর এখানেই নিহিত আছে উভয় ধর্মের মধ্যে অন্তর্নিহিত সাদৃশ্য। 

কিন্তু পরবর্তীকালে হিন্দুধর্মে বাহ্যিক ও লৌকিকভাবে পৌত্তলিকতা এবং বহুত্ববাদের অনুপ্রবেশ ঘটে এবং ইসলামধর্মের সঙ্গে তার ব্যবধান রচিত হয়।

পবিত্র কোরআনের সূরা ইখলাসে আছে—“বলো, তিনি আল্লাহ অদ্বৈত, আল্লাহ সর্ব বিষয়ের নির্ভরস্থল; তিনি জনক নন এবং জাতকও নন এবং তার সমতুল্য কেউই নেই’। ” 

(১১২ নং সূরা : আয়াত ১-৪) এখানে ‘সামাদ’ শব্দটি খুবই অর্থবহ। এই শব্দটি কেবলমাত্র আল্লাহর ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। বিশ্বের সমস্ত কিছু ক্ষণস্থায়ী, সমস্ত কিছু শর্তসাপেক্ষ। কিন্তু আল্লাহ শাশ্বত। 

ইসলামধর্মের ঈশ্বর ও আল্লাহ্‌ সম্পর্কে ধারণা।

অন্য সব কিছু সৃষ্টি। আল্লাহ স্রষ্টা। আল্লাহ কারোর উপর নির্ভরশীল নন, সমগ্র সৃষ্টি তার উপর নির্ভরশীল। এই সুরাই ধর্মতত্ত্বের ক্ষেত্রে পরশপাথর। বিশ্বজগতের প্রতিপালক মহান আল্লাহকে চিনতে গেলে এ সূরাই কষ্টিপাথরের কাজ করবে। যদি আপনি স্বর্ণালঙ্কার কিনতে অথবা বিক্রি করতে চান, আপনাকে প্রথমে এর মূল্যায়ন করতে হবে। স্বর্ণালঙ্কারের এই মূল্যায়ন করা হয় কষ্টিপাথরের মাধ্যমে। সাকরাই এ কাজটি করেন।

তিনি কষ্টিপাথরের উপর অলঙ্কারটি ঘষেন এবং এর রংয়ের সঙ্গে আসল সোনার রং যাচাই করেন। যদি এটা ২৪ ক্যারেট সোনার সঙ্গে মিলে যায় তাহলে তিনি বলবেন, গহনাটি ২৪ ক্যারেট খাঁটি সোনা। যদি এটা পরিপূর্ণ খাটি সোনা না হয়, তাহলে তিনি বলবেন, এটা ২২ ক্যারেট অথবা ১৮ ক্যারেট অথবা বলবেন, এটা আদৌ সোনা নয়। যা চকচক করে তা সবসময় সোনা হয় না। 

অনুরূপভাবে সূরা ইখলাস ধর্মতত্ত্বের ক্ষেত্রে কষ্টিপাথর যার সাহায্যে যাচাই করা যাবে আপনার আরাধ্য ঈশ্বর সত্য না মিথ্যা। সুরা ইখলাসে সর্বশক্তিমান আল্লাহর চার আয়াতের সংজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। বিশ্বনিখিলের স্রষ্টা যিনি একমাত্র তার ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য এই আলোকিত চারটি বাক্য। অন্য কোনও উপাস্যের ক্ষেত্রে এই চারটি বাক্য প্রযোজ্য হতে পারে না।

ঈশ্বর ও আল্লাহর গুণাবলি।

আল্লাহর আছে সবচেয়ে সুন্দর নাম । ‘সূরা বনি-ইসরাইলে’ আছে— “বলো, তোমরা ‘আল্লাহ’ নামে আহ্বান করো বা রাহমান নামে আহ্বান করো, তোমরা যে নামেই আহ্বান করে তার সকল নামই তো সুন্দর।” (১৭ নং সূরা , আয়াত ১১০) আল-কোরআনে সর্বশক্তিমান আল্লাহর ৯৯টি গুণবাচক নাম আছে। সেগুলির মধ্যে অন্যতম হল—আর-রাহমান, আর-রাহিম, আল-হাকিম—অনন্ত করুণাময়, পরম দয়ালু, পরম অনুগ্রহশীল ইত্যাদি। কোরআনে বিশ্বজগতের প্রতিপালক মহান আল্লাহর মধুরতম নামের প্রতিধ্বনি শোনা গিয়েছে বারে বারে। তার সুন্দরতম নামের কথা উল্লিখিত হয়েছে- সূরা আ'রাফ (৭ নং সূরা , আয়াত ১৮০), সূরা ত্বাহা (২০ নং সূরা , আয়াত ৮), সূরা হাশর (৫৯ নং সূরা , আয়াত ২৩-২৪) ইত্যাদি সূরাতে।

‘গডে’র চেয়ে আল্লাহ নামটি অনেক বেশি পছন্দনীয়।

মুসলিমরা কোনও ভাষায় ‘আল্লাহ’ শব্দের কোনও প্রতিশব্দ অনুদিত শব্দ প্রত্যাশা করেন না। ইংরেজি ‘গড়’ শব্দটির চেয়ে আল্লাহ শব্দটিও মুসলিমদের কাছে অধিকতর পছন্দনীয়। ‘God’ শব্দটির সঙ্গে যদি s’ যুক্ত করা হয় তাহলে তা বহুবচন হয়ে ‘gods'-এ পরিণত হয়, যার অর্থ ‘দেবতারা। আবার ‘God'-এর সঙ্গে ‘dess' যুক্ত করলে হয় ‘goddess' বা দেবী। কিন্তু আল্লাহ শব্দের কোনও নারী পুরুষ নেই, কোনও লিঙ্গ নেই। যদি আপনি God-এর সঙ্গে ‘father' যুক্ত করেন তাহলে হয় ‘godfather', যার অর্থ ধর্মপিতা।

কিন্তু আল্লাহর সঙ্গে ‘আব্বা’ বা ‘father' যুক্ত করে। ‘আল্লাহ আব্বা’ বা ‘আল্লাহফাদার’ করা যায় না। সারা বিশ্বের অভিধানে অথবা ইসলামে ওইরকম কোনও শব্দের স্থান নেই। আপনি যদি God-এর সঙ্গে ‘mother’ যুক্ত করেন তাহলে হয় ‘godmother', কিন্তু ইসলামে কোনও ‘আল্লাহ আম্মি’ বা ‘আল্লাহমাদার’ নেই। আপনি যদি God-এর পুর্বে ‘tin' ব্যবহার করেন। তাহলে হয় tingod, যার অর্থ fake god বা জাল গড় (উপাস্য)। কিন্তু আল্লাহর আগে ওই রকম ‘tin’ বা ‘fake' বসানো হয় না। আল্লাহ একটি একক ও অন্যসাধারণ শব্দ, যা বিশুদ্ধ ও অবিমিশ্র। সেজন্য মুসলমানরা সর্বশক্তিমান স্রষ্টার ক্ষেত্রে আল্লাহ নামটি পছন্দ করেন, অন্য কোনও নাম নয়।

ইসলাম ও হিন্দু ধর্মের সাদৃশ্য - সূচিপত্র।