ইসলাম ও হিন্দুধর্মের ঈমান বা বিশ্বাসের স্বরূপ।

ঈমান সম্পর্কে পবিত্র কোরআনে সর্বশক্তিমান আল্লাহ ঘোষণা করেছেন। পূর্ব অথবা পশ্চিম দিকে তোমাদের মুখ ফেরানোতে কোনও পুণ্য নেই; কিন্তু পুণ্য আছে আল্লাহ, পরকাল, ফেরেস্তাগণ, কিতাবসমূহ এবং নবিগণকে বিশ্বাস করলে এবং আল্লাহর ভালোবাসায় আত্মীয়-স্বজন, 

পিতৃহীন, অভাবগ্রস্ত, পথের কাঙাল, সাহায্যপ্রার্থীগণকে এবং দাসমুক্তির জন্য অর্থদান করলে, নামাজ যথাযথভাবে পড়লে ও যাকাত (দান) করলে এবং প্রতিশ্রুতি পালন করলে, এবং দুঃখ, কষ্ট ও যুদ্ধের সময় ধৈর্যধারণ করলে। (সূরা বাকারাহ : ২ নং সূরা, আয়াত ১৭৭)।

ইসলাম ও হিন্দুধর্মের ঈমান বা বিশ্বাসের স্বরূপ।

সহিহ মুসলিম শরিফে ঈমান সম্পর্কে আছে –“একজন ব্যক্তি নবি (সাঃ)-এর কাছে এসে বলল, আল্লাহর রসূল, ঈমান কী? রসূল (সাঃ) বললেন—আল্লাহ, আল্লাহর ফেরেস্তা, তাঁর প্রেরিত কিতাবসমূহ, তাঁর প্রেরিত রসূলগণ, পুনরুত্থান অর্থাৎ পরকাল এবং তকদির বা ভাগ্যে বিশ্বাস করার নাম ঈমান।” (২ নং অধ্যায় , ৬ নং হাদিস)

অর্থাৎ ইসলামধর্মে ইমান বা বিশ্বাসের ভিত্তি হল ছ’টি : (১) আল্লাহ, (২) তাঁর ফেরেশতাগণ, (৩) তার প্রেরিত গ্রন্থসমূহ, (৪) তার প্রেরিত রসূলগণ, (৫) পরকাল, (৬) ভাগ্য।

হিন্দুধর্মের ঈমান বা বিশ্বাস।

যদি আপনি সাধারণ হিন্দুদের জিজ্ঞাসা করেন, হিন্দুরা কতগুলি ভগবানে বিশ্বাস করেন, তাহলে কেউ বলবেন হিন্দুরা তিনজন, কেউ বলবেন হিন্দুরা তেত্রিশ জন, আবার কেউ বলবেন হিন্দুরা তেত্রিশ কোটি ভগবানে বিশ্বাস করেন। কিন্তু যে হিন্দু ধর্মগ্রন্থ পাঠ করেছেন, সে রকম শিক্ষিত হিন্দুকে যদি আপনি ওই একই প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করেন, তাহলে তিনি উত্তর দেবেন, হিন্দুদের অবশ্যই এক ঈশ্বরে বিশ্বাস করা উচিত এবং এক ঈশ্বরের উপাসনা করা উচিত।

ইসলাম ও হিন্দুধর্মের ঈমান বা বিশ্বাসের পার্থক্য  শুধুমাত্র ‘র’-এর। 

মুসলিমরা বিশ্বাস করেন : Everything is 'God's'. প্রতিটি জিনিস আল্লাহর সৃষ্টি। আর হিন্দুরা বিশ্বাস করেন : Everything is God. প্রতিটি জিনিসই ভগবান। অধিকাংশ হিন্দু বহুত্ববাদে বিশ্বাসী। তারা মনে করেন প্রতিটি জিনিস ভগবান। গাছ ভগবান, সূর্য ভগবান, চন্দ্র ভগবান, সাপ ভগবান, হনুমান ভগবান, মানুষ ভগবান। কিন্তু মুসলমানরা বিশ্বাস করেন প্রতিটি জিনিস আল্লাহর সৃষ্টি। 

গাছকে আল্লাহ সৃষ্টি করেছেন, সূর্যকে আল্লাহ সৃষ্টি করেছেন। চন্দ্রকে আল্লাহ সৃষ্টি করেছেন, সাপকে আল্লাহ সৃষ্টি করেছেন, হনুমানকে আল্লাহ সৃষ্টি করেছেন, মানুষকে আল্লাহ সৃষ্টি করেছেন। অর্থাৎ বােঝা যাচ্ছে, দুটি প্রধান ধর্মের মধ্যে ব্যবধান কেবলমাত্র ‘অ্যাপট্রফি এস’ ('s)-এর। এই অ্যাপট্রফি এস’ বা ‘র’-এর ব্যবধান যদি মুছে ফেলা যায় তাহলে হিন্দু ও মুসলিম একত্রিত হতে পারবে।

কোরআন শরিফে আছে। “তুমি বলাে, হে ধর্মগ্রন্থধারীগণ। এসাে সে কথায় যা তােমাদের ও আমাদের মধ্যে একই; আমরা আল্লাহ ছাড়া কারও উপাসনা করি না, কোনও কিছুকেই তার অংশী করি না এবং আমাদের কেউ আল্লাহ ছাড়া অন্য কাউকেই প্রতিপালকরূপে গ্রহণ করে না।” (সূরা আল-ই ইমরান : ৩ নং সূরা , আয়াত ৬৪)

আসুন আমরা দুটি ধর্মে যা ‘একই’ সেই বিষয়ে আসি। আর সেই অভিন্ন মূলগত বিষয়ে আসতে গেলে আমাদের দুটি ধর্মের ধর্মগ্রন্থ পড়তে হবে—মানুষের আচার-আচরণ পর্যবেক্ষণ করে ধর্মের মূলগত বিষয়টি জানা যাবে না।

ইসলাম ও হিন্দু ধর্মের সাদৃশ্য - সূচিপত্র।